- Back to Home »
- একটু বড় গল্প »
- ফেরা / শেষ কিস্তি
Posted by : Sayantari Ghosh
Wednesday, May 11, 2016
পাঁচ
পার্কিং প্লেসের ছাতিম গাছটার গায়ে হেলান দিয়ে চুপ করে বসেছিল টুপুর। মাঝেমাঝে এক-একটা পুরোনো বৃষ্টির ফোঁটা গাছের পাতাকে ছুঁয়ে থাকতে থাকতে হঠাত্ সব ভুলে গিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল ওর গায়ে... রাত আড়াইটে অব্দি ঝিপঝিপ করে বৃষ্টি হয়েছে টানা... প্রথমে গুমরে গুমরে... তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে... শেষে ডুকরে ভিজিয়েছে সারা রাত ধরে... এখন থেমে গেছে... সব... সব থেমে গেছে...
পার্কিং প্লেসের ছাতিম গাছটার গায়ে হেলান দিয়ে চুপ করে বসেছিল টুপুর। মাঝেমাঝে এক-একটা পুরোনো বৃষ্টির ফোঁটা গাছের পাতাকে ছুঁয়ে থাকতে থাকতে হঠাত্ সব ভুলে গিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল ওর গায়ে... রাত আড়াইটে অব্দি ঝিপঝিপ করে বৃষ্টি হয়েছে টানা... প্রথমে গুমরে গুমরে... তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে... শেষে ডুকরে ভিজিয়েছে সারা রাত ধরে... এখন থেমে গেছে... সব... সব থেমে গেছে...
এরকম মেঘলা ফ্যাকাশে ভোর আগে কোনোদিন হয় নি কখনও! আকাশে থোক থোক কালি... মেঘেদের গায়ে আর মেঘেদের ওপারে যে থাকে, তার গায়েও... এ কালি কি যাবে কোনোদিন...? এ ক’দিনে কতবার কতভাবে একটিমাত্র প্রার্থনার বদলে সবকিছু সঅবকিছু বন্ধক রেখে দিতে চেয়েছে টুপুর... এটুকু দেওয়া যেত না...না?
বসে বসে ভাবছিল টুপুর। ছকে বাঁধা ভাবনা নয়... জিগেস করলে গুছিয়ে বলাও যাবে না যে কি ভাবা হল... ছন্নছাড়া টুকরো চিন্তা সব... অপ্রয়োজনীয়... হয়তঃ এখন অপ্রাসঙ্গিকও... কিন্তু অপ্রতিরোধ্য...
পাঁচদিন পাঁচরাত বাদে আজ বাড়ি ফিরবে টুপুর... প্রতিদিনের মত মা আর হাত ধরে টানাটানি করবে না আজ সন্ধ্যেয়... রাতে কে কে থাকবে এখানে, সেই নিয়ে হিসেব হবে না বিকেলের চায়ের সাথে... মিতুলদা গম্ভীর হয়ে বলবে না, “আচ্ছা, তাহলে আমিই...”
সারাদিনটা আজ অন্যরকম হবে... বাড়ি ফেরার দিনটা অন্যরকম হবে, সেটা অবশ্য জানতো টুপুর... কিন্তু এই নতুন ‘অন্যরকম’টার কথা কখখনো ভাবা হয় নি...
কেন...? সাহস হয় নি বলে...? কে জানে...
অন্যরকম ভোর দিয়ে শুরু... ভয়-জড়ানো টেলিফোন, ছমছমে কান্না আর ভোরের আলো একসাথে এসেছে আজ... তারপর থেকে এখনও চলছে কান্নার থেমে যাওয়া আর আবার করে কালবৈশাখীর মত ফিরে আসা... আর সাথে চলছে অপেক্ষা... কলকাতা, ধানবাদ, মেদিনীপুর থেকে রাত-থাকতে বেরিয়ে পড়া কিছু উদভ্রান্ত মানুষের অপেক্ষা... এরপর আরও অন্যরকম... এখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি... পাড়া... তারপর দাদুমনির স্কুল... তারপর..............................
উফ! কোথাও আর তিলমাত্র জোর নেই মনে হচ্ছে... এখন যদি ঘুমিয়ে পড়া যেত? বা যদি ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখা যেত যে এসবকিছু মারাত্মক দুঃস্বপ্ন একটা...? এখন অন্ধকার হয়ে যেত যদি? জমাট অন্ধকার... কারো মুখ দ্যাখা যাবে না... কোন কান্নার শব্দ কানে আসবে না... এই পাঁচদিনের গায়ে জড়িয়ে থাকা বৃষ্টির গন্ধটাও দূর হয়ে যাবে... নিঝুম অন্ধকার... যাতে একটাও কুরে কুরে খাওয়া প্রশ্ন থাকবে না... শুধু আশ্রয় থাকবে... স্বস্তির... শান্তির...
ধোঁয়াশার মত করে ক্লান্তি জমছে চোখের পাতার ওপর... ফ্যাকাশে কালির ভোর ফিকে হয়ে যাচ্ছে... বৃষ্টিধোয়া আকাশে কাচের মতন রোদ্দুর... বাঁক দেওয়া চন্দনা ওই তো কাছেই... ধাপ কেটে ঘাট নেমে গেছে দালান বাড়ির পাশ থেকে... বোধন বেলগাছটায় কতদিন ধূপ দ্যাখায় না কেউ... কালিতলা খালি... পাটমহাদেব এক্কেবারে একলা...
আচ্ছা, খালকুলার আমের বাগানে কি এখনও ওভাবেই সত্যি সত্যি গাছ ভেঙে পড়ে ফলের ভারে...? সাইকেলের স্পোক দিয়ে তৈরী ক্যাঁটা দিয়ে আকাশভাঙা বৃষ্টিতে আজো বুঝি কেউ অকারনেই রাশি রাশি শোল মাছ ধরে.....................?
আচ্ছা, খালকুলার আমের বাগানে কি এখনও ওভাবেই সত্যি সত্যি গাছ ভেঙে পড়ে ফলের ভারে...? সাইকেলের স্পোক দিয়ে তৈরী ক্যাঁটা দিয়ে আকাশভাঙা বৃষ্টিতে আজো বুঝি কেউ অকারনেই রাশি রাশি শোল মাছ ধরে.....................?
—“এই!”
হাতে একটা আলতো ছোঁয়া সবজেটে নীল স্বপ্নটার মাঝখান থেকে টেনে নামিয়ে আনল হাসপাতালের পার্কিংপ্লেসে।
হাতে একটা আলতো ছোঁয়া সবজেটে নীল স্বপ্নটার মাঝখান থেকে টেনে নামিয়ে আনল হাসপাতালের পার্কিংপ্লেসে।
শুভ!
এই এতক্ষনে প্রথমবার মনে হল যেন টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাবার পুরো স্বাধীনতা আছে টুপুরের। সেই ভোররাত থেকে সবাই এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কতবার কেঁদেছে... কতবার...
আর ও.......? ওর বুঝি কষ্ট হয় না...........? ওর বুঝি কাঁদতে নেই...........?
আর ও.......? ওর বুঝি কষ্ট হয় না...........? ওর বুঝি কাঁদতে নেই...........?
ওর হাতটাকে নিজের হাতদুটোর মধ্যে টেনে নিল শুভ... আর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হেরে যেতে বসা অভিমানেরা নিঃশব্দে দু’চোখ ভাসিয়ে দিল মূহুর্তে...
বুকের সব জ্বালার ঘোর কাটিয়ে দিয়ে এক পশলা বৃষ্টি নামল... আর তার মাঝে রোদের মত আলতো করে উঁকি দিয়ে গেল কয়েকটা ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দ,
বুকের সব জ্বালার ঘোর কাটিয়ে দিয়ে এক পশলা বৃষ্টি নামল... আর তার মাঝে রোদের মত আলতো করে উঁকি দিয়ে গেল কয়েকটা ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দ,
—“......... আমি............ আমি ফিরব শুভ... আমি যাবো. . . . . . ”
[শেষ]