Popular Post

Archive for 2016

উইকএন্ডে চলুন, তিঞ্চুলে

By : Sayantari Ghosh

 

কাল রাতে একটা জম্পেশ স্বপ্ন দেখলাম।

দেখলাম, আমি ট্রেনে করে যাচ্ছি, সাইড লোয়ার বার্থে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাত ঘুম ভেঙে গেল। দেখি, একটা সবুজ পাইনে ঘেরা দিগন্তজোড়া চা-বাগানের পাশে ট্রেন দাঁড়িয়ে গেছে... রেললাইনটাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে ফুটে আছে ঝাঁক ঝাঁক গোলাপী আর হলুদ ঘাসফুল। খানিকটা দূরে বেঁকে চলে গেছে একটা হাতছানি দেওয়া সর্পিল রাস্তা, রাস্তার ধার বরাবর পতপত করে উড়ছে তিব্বতী ভূততাড়ানি পতাকার সারি... ডানদিকে অনেকটা দূরে একটা সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের কোল আলো করে কমলালেবুর বাগানে ঘেরা একটা ছোট্ট রংচঙে মনাস্ট্রি। আর সবার পিছনে টারকুইজ নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝলমল করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা!

স্বপ্নটা আজ সকালে উঠেও আলো করে ছিল মনটা। দাঁত মাজতে মাজতে ভাবছিলাম, কোথায় যেন দেখা ছবিগুলো... ফুলের দল, চা-বাগান, মনাস্ট্রি, গাছ উপচানো কমলালেবু, পাইনের সারি, টিবেটান প্রেয়ার ফ্ল্যাগ, কাঞ্চনজঙ্ঘা... টুকরো টুকরো ছবির একখানা কোলাজ যেন দেখলাম!

চায়ের জল’টা যেই সোনালী হয়ে ফুটে উঠলো, অম্নি মনে পড়ে গেল... তিঞ্চুলে...!

বছর তিনেক হয়ে গেল তিঞ্চুলে ঘুরে এসেছি, জানেন, কিন্তু যখনই ট্যুর’টা মনে পড়ে কি যে ভালো লাগে কি বলব! আজ ছবিগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে ভাবলাম যেটুকু যা মনে আছে এখানে তুলে রাখি। আপনি হয়তঃ কাজের চাপে দম ফেলতে পারছেন না, বা কোনো কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছেনহয়তঃ আপনার খুব মনখারাপ যাচ্ছে, কিম্বা প্রাণ’টা ছটফট করছে ব্যস্ত শহরের হুড়োহুড়ি’তে। সেক্ষেত্রে এ লেখা’টা আপনার কাজে লেগেও যেতে পারে। উইকএন্ডের আশেপাশে আর একটা কি দুটো দিন ছুটি ম্যানেজ করতে পারবেন? তাহলে তিঞ্চুলে’টা ঘুরে আসুন। নিজের সাথে সময় কাটাতে হলে এ জায়গার কোনো জুড়ি নেই। এখানে পাইনবনের আলোছায়ার ঘুরতে ঘুরতে আপনার নিজের সাথে নতুন করে দেখা হয়ে যাবে, কথা দিতে পারি।

এবার আপনি বলবেন, “তিঞ্চুলে... হেঃ হেঃ, অদ্ভূত নাম... কোথায় জায়গাটা?”

আমিঃ “কাছেই... উত্তর বাংলা... নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ঠিক পঁচাত্তর কিলোমিটার... শুক্কুরবার রাত্তিরে অফিস করে ট্রেন ধরে নিন... সকাল সকাল নামবেন... তারপর গাড়ি... দুপুরের লাঞ্চ তিঞ্চুলে’তে... আবার সোমবার’টা ছুটি নিলে মঙ্গলবার ভোরে আপনি আবার আপনার ব্যস্ত শহরের রাস্তায়... উইকএন্ডে ঘুরে আসার মত এরকম রোম্যান্টিক জায়গা খুব কম হয়, বুঝলেন...! নিচু হয়ে থাকা পাইনবনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা রাস্তা... গেলে মনে হবে গ্রাম’টা যেন চা’য়ের বাগানে গা এলিয়ে আলসেমি করছে... বেড়ানোর প্ন্যানও একেবারে তৈরী... কোথায় যাবেন কি বেড়াবেন সে নিয়ে বেশী ভাবনারও দরকার নেই... তিঞ্চুলের গুরুং গেস্ট হাউস বুক করে রাখলে সব ব্যবস্থা ওরাই করে দেবে...”

  



আপনি(খানিক ডিপ্রেসড মুখ করে), “অ... গেস্ট হাউস... ভালো হোটেল কিছু নেই? রিসর্টগোছের আর কি...”

আমি (রে রে করে উঠে), “আরে বলেন কি? ভুলেও এ’কথা আর মুখে আনবেন না... অনেকরকম হোটেল রিসর্টের থেকেছি মশাই, কিন্তু গুরুং গেস্ট হাউসের মত ভালো ব্যবস্থা আর আদরযত্ন খুব কম জায়গায় পেয়েছি... যে’কদিন থাকবেন, মনে হবে আপনাকে পেয়ে বোধহয় ওদের আনন্দ আর ধরছে না... ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠিয়ে অসাধারণ চা খাইয়ে আপনাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাতে নিয়ে যাবে, বাড়ির ছেলেরা সঙ্গে করে ট্রেকিং’এ নিয়ে যাবে... আর খেতে বসে আপনি বলবেন যে ‘আর পারবো না’, তবু আপনার পাতে জোর করে দু’টো লুচি গুঁজে দেওয়া হবে... একেবারে জামাই-আদর যাকে বলে...”

আপনি, “তাই নাকি? বাব্বাহ্‌, দারুন ব্যাপার তো হে... তা প্ন্যানটা একটু গুছিয়ে বল দিকিনি...”

আমি, “ওই তো... ধরে নিচ্ছি আপনি সোমবার’টা ছুটি ম্যানেজ করেছেন... তাহলে শুক্রবার রাতে ট্রেন, শনিবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি, দুপুরে তিঞ্চুলে... বিকেল’টা জাস্ট পাইনবনে ঘুরে, পাখির ডাক শুনে, ঝোলা বারান্দায় বসে দার্জিলিং টি খেয়ে রিল্যাস্ক করুন... রোববার ভোরবেলা উঠে পড়ে গেস্ট হাউসের টাওয়ার থেকে দেখে নিন সানরাইস... যারা আগে দেখেছেন তাদের আর নতুন করে বলার কিছু নেই যে কি অভাবনীয় রকমের সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়... আমার দেখা সেরা কাঞ্চনজঙ্ঘা কিন্তু আমি তিঞ্চুলে থেকেই দেখেছি, নভেম্বর মাসের ধারালো ঠান্ডায় ভোর পৌনে পাঁচটায়। আমার নিজের কথা বলতে পারি, স্পেলবাউন্ড বলতে যা বোঝায় আমার সেই দশা হয়েছিল! যখন কমলালেবুর মত সূর্য’টা আস্তে আস্তে উঁকি দেবে আর গলানো সোনা ঢেলে বাঁধিয়ে দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা’কে, তখন আপনি পৃথিবীর আর সব কিছু পুরোপুরি ভুলে যাবেন কয়েকমিনিটের জন্য! মনে হবে সময় থমকে গেছে আর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন স্বর্গের দরজায়। চোখ ফেরানো যায় না এত সুন্দর, অথচ সে সৌন্দর্য জমকালো না কি স্নিগ্ধ সেটা আমি এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি... অসাধারণ অভিজ্ঞতা... ভাষায় বোঝাতে পারবো না আর কি...”



আপনি, “আহা... মন ভরে যাচ্ছে গো... সত্যি এত সুন্দর?”

আমি, “সে তো হবেই, কাঞ্চনজঙ্ঘা বলে কথা, এ বাংলায় ও’রকম ডাকসাইটে সুন্দরী আর ক'জন আছে বলুন! হেঃ হেঃ হেঃ... সানরাইস হয়ে গেল তাহলে... সূর্য ওঠার পর কাঞ্চনজঙ্ঘা যখন আপনার মন ভরিয়ে দিয়েছে, তখন বাগানে চেয়ার পেতে বসে ব্রেকফাস্ট সেরে নিন... এরপর কিন্তু সারাদিন বেড়ানো... শুরু করুন হাতের কাছের গ্রাম লামাহাট্টা দিয়ে (এখানেও অনেক নতুন হোটেল হয়েছে, অনেকে তিঞ্চুলে’তে না থেকে এখানেও থাকেন)... এখানে আছে পাহাড়ের ধাপ বেয়ে মরসুমী ফুলের বাগান, আর পাখির ডাকে কুয়াশার ওড়নায় ঢাকা একটা ছোট্ট লেক... ঘন্টাখানেক এখানে কাটান আর অফিসের যাবতীয় দুশ্চিন্তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিন... তারপর চলে আসুন তিঞ্চুলে মনাস্ট্রি... পাহাড়ের চূড়োয় ছোট্ট এই মনাস্ট্রি’টিও শান্তি-দিয়ে-মোড়া... এরপর দুপুরের খাওয়া সেরে বড়া-মাঙ্গওয়া গ্রামের কমলালেবুর বাগান... যাওয়ার রাস্তা একটু ভাঙাচোরা, কিন্তু বাগান’টি দেখে মন ভরে যাবে... আর সব শেষে তিস্তা-রঙ্গিতের সঙ্গম, ত্রিবেণী’ও বলে জায়গাটা’কে অনেকে... দেখবেন চঞ্চল, উদ্ধত, সবুজ রঙ্গিত নদী হঠাত এক পাহাড়ের বাঁকে এসে শান্ত তিস্তার ধূসর রহস্যের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে... প্রতি’টা জায়গা চোখজুড়ানো, মনভরানো... ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু নিস্তব্ধতা’টাকে উপভোগ করে কাটিয়ে দিতে পারবেন... মনে হবে, এ’সব জায়গায় কথা বলার প্রয়োজনই নেই কোনো... সব কথা এম্নিই বলা হয়ে যায়... সব চিন্তা আপনিই দূর হয়ে যায়... যখন সন্ধ্যেবেলা গেস্ট হাউস ফিরবেন, ততক্ষনে রবিবার দিনটা শেষ হয়ে গেছে... আর আপনার ছুটিও প্রায় শেষ...”
  



আপনি, “ইস...”

আমি, (বলেই চলেছি), “পরেরদিন সকাল’টা তাই নিজের মতন করে কাটান... গেস্ট হাউসের একজন কাউকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন ট্রেকিং’এ... অথবা পায়ে হেঁটে উঁচুনিচু পথে নিটোল ছোট্ট এই গ্রাম’টা ঘুরে নিন... পাইনে ঘেরা এক চিলতে মাঠে ক্রিকেট খেলে নিন গ্রামের ছোটদের সাথে... কিম্বা প্রিয়জনের হাত ধরে এক্সপ্লোর করে আসুন পাইনবনের আলোআঁধারির ভেতর দিয়ে হারিয়ে যাওয়া কোনো একটি আঁকাবাঁকা শুঁড়িপথ... দশ’টা নাগাদ ফিরে এসে দেখবেন গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে... ব্রেকফাস্ট রেডি... মনে হবে শুধু আপনিই তৈরী নন তিঞ্চুলে’কে ছেড়ে আসতে... বিকেলে যখন এন.জে.পি. থেকে ট্রেনে উঠবেন দেখবেন তখনও আপনার মন মনাস্ট্রির প্রেয়ার ফ্ল্যাগের পাশে, চা’বাগানের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে তাকিয়ে আছে...”














আপনি, “উফফ, যা বলেছ... খরচ-খরচার একটা এস্টিমেট দাও দেখি এখুনি... এত কিছু শুনে যে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠছে ভাই...”

আমি, “যান না, আমিও তো যেতেই বলছি... গুরুং গেস্ট হাউসের ওয়েবসাইট দিয়ে দিচ্ছি... যোগাযোগ করুন... ইচ্ছে হলে লামাহাট্টা বা বড়ামাঙ্গওয়া’তেও থাকতে পারেন... থাকার খরচা সব জায়গায় কম-বেশি একই... ১২০০-১৭০০ ঘরভাড়া, সঙ্গে সারাদিনে চারবেলার খাওয়া-দাওয়া ৫০০-৬০০ মত। বাড়তি খরচা হল গাড়ি... মনে রাখবেন জলপাইগুড়ি থেকে পিক আপ আর ড্রপের গাড়ি বুকিং’এর কথাটা হোটেল’কে বলতে ভুলবেন না... তিঞ্চুলে’তে কিন্তু ট্যুরিস্ট’এর ভিড় নেই, ফলে শেয়ারে গাড়িও নেই... স্টেশনে নেমে গাড়ি করতে গেলে ড্রাইভার’রা যা খুশি দর হাঁকতে পারে... হোটেল থেকেই গাড়ি’টার ব্যবস্থা হলে ভালো... সে খরচা’টা আমাদের পড়েছিল ১৮০০টাকা... আমি কিন্তু তিন বছর আগের কথা বলছি...

আপনি, “ওক্কে, বুঝলাম, সব মিলে মন্দ নয়, বুঝলে... দেখি কবে যাওয়া যায়... আর দরকারী কিছু বাদ পড়ছে? ভেবে বল দেখি...”

আমি, “ও হ্যাঁ, ভুলেই গেছিলাম বলতে... আপনাদের বেড়ানোর দল যদি অ্যাডভেঞ্চারাস হয়, তাহলে রাফটিং করতে পারেন তিস্তায়... ত্রিবেনী’তেই রাফটিং হয়, ভীষণ এনজয় করবেন... আর হ্যাঁ, এন.জে.পি.’র ট্রেনের টিকিট কিন্তু সময় থাকতে কেটে ফেলুন, টিকিট পাওয়া যায় না দেরী হয়ে গেল আর... ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে... দুটো দিনের জন্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলুন না তিঞ্চুলের পাইনবনে... দেখবেন, নিজেকে খুঁজে পাবেন নতুন করে... ফিরে এসে আমাকে জানাবেন কিন্তু কেমন ঘুরলেন...


উইকএন্ডে চলুন, বড়ন্তি

By : Sayantari Ghosh


মাঝেমাঝে উইকএন্ড’গুলো ঘরে বসে থাকতে হবে ভেবে আপনার গায়ে জ্বর আসে না? আমার তো প্রায়শঃই আসে! বিশেষতঃ যদি তার সাথে একটা সোমবার পনেরই অগাস্ট পড়ে যায়, বা শুক্কুরবার’টা হয় গুড ফ্রাইডে। আমার তো ভাই তেমন হলে মাথা দপদপ, কান কটকট, হাত নিশপিশ সব একসাথে হতে থাকে। পড়াশোনা করতে বসলেই ব্যাগ গোছাতে ইচ্ছে করে, পুরোনো বেড়াতে যাওয়ার ছবিগুলো দেখলেই কান্না পায়, ইন্টারনেট খুললেই হাত চলে যায় ইন্ডিয়ান রেলওয়েজের ওয়েবসাইটের দিকে। বুকের ভেতর নানারকম প্রশ্ন খচরমচর করে, “কোথায় টিকিট আছে দেখি? কবে যাওয়া যায়? কবে ফেরা যায়? থাকবো কোথায়?” আরো কত কি!

আমি তাই যখন-তখন বেরিয়ে পড়ি পিঠে ব্যাগ নিয়ে, সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বা বাড়ির কাউকে জুটিয়ে নিই। তো এরকমই একটা উইকএন্ডে আমরা ঘুরে এলাম বড়ন্তি। নেক্সট ছুটি’তে যদি আপনার ইচ্ছে হয়, তাই ডিটেইলগুলো ব্লগে তুলে রাখছি। যদি আপনাদের কারো কাজে লেগে যায়...

এবার আপনি বলবেন, “কেন যাবো বড়ন্তি? সেখানে আছে’টা কি?”

আমি বলব, “আপনার গ্রাম ভালো লাগে? মেঠো আলপথ, লালমাটির ধূলোওড়া রাস্তা, পরিষ্কার আকাশ, খোলা হাওয়া, অন্ধকার রাতের আকাশে একটা-দুটো করে উল্কা? তার সাথে জুড়ে নিন ছড়ানো-ছেটানো পাহাড়, টিলা, শিমুল-পলাশের জঙ্গল আর একখানা বি-শা-ল লেক। নির্জন, ছিমছাম, নির্ঝঞ্ঝাট। কলকাতার হট্টগোল থেকে দুটো দিন নিজেকে ছুটি দিতে ইচ্ছে করলে আপনার এ জায়গা ভালো লাগবে আমার মনে হয়...”

এবার আপনি, “জায়গাটা কোথায় বল তো?”

আমি, “মুরাডি চেনেন? যেখানে খুব বড় একটা চোখের হাসপাতাল আছে? চেনেন না? আমি বলে দিচ্ছি। আসানসোল চেনেন তো? বড়ন্তি আসানসোল থেকে ৪০ কিলোমিটার মোটামুটি। একটা উইকএন্ড কাটিয়ে আসার পক্ষে কলকাতা থেকে বড়ন্তির দূরত্ব’টা কিন্তু এক্কেবারে আইডিয়াল।
ধরুন, যদি কলকাতা থেকে যান তাহলে দু’ভাবে যেতে পারেন। এক, আপনি চাপতে পারেন আসানসোল যাওয়ার যে কোন ট্রেনে। আসানসোলে নেমে চেপে পড়ুন আদ্রা লাইনের যে কোনো লোকালে, চতুর্থ স্টেশন মুরাডি, আধ-ঘন্টার রাস্তা। আবার অন্য আরেকটা উপায় হল শুক্কুরবার অফিস সেরে এসে আপনি রাত্তিরে ধরে নিতে পারেন হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। ভোর পাঁচটায় নামবেন আদ্রা। এক কাপ চা খেয়ে আসানসোল লাইনের লোকাল ট্রেন ধরুন, এদিন থেকেও চার নম্বর স্টেশন মুরাডি। আমার মতে দ্বিতীয়’টা আপনার পক্ষে বেটার অপশন। তাতে সময় বাঁচবে। তবে যদি আসানসোল বা আদ্রা থেকে দু’দিনের জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়তে চান, তা হলে আপনার আসানসোল হয়ে যাওয়াই ভালো, আদ্রায় অত গাড়ি পাবেন না।

আপনি, “মুরাডি, আদ্রা, জায়গাগুলোর নাম শুনিইনি আগে কখনও...”

আমি, “হেঃ হেঃ হেঃ... জয়চন্ডী পাহাড়ের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? হীরক রাজার দেশের অনেকখানি শুটিং হয়েছে কিন্তু এই এলাকায়, সেই পাহাড়ে মাস্টারমশাইএর লুকিয়ে থাকার জায়গাটা মনে আছে তো? দেখবেন, দেখলেই চিনে ফেলবেন। আদ্রার দিক থেকে এলে জয়চন্ডী পাহাড় স্টেশনটাও পেরোবে, অনেকে ট্রেকিং করতে আসে এই পাহাড়ে... ট্রেন থেকেই দেখতে পাবেন...

ট্রেন থেকে নেমে দেখবেন, মুরাডি স্টেশন’টা চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে যেন। কোন ব্যস্ততা নেই কোথাও। নেমে পড়ে একটা রিক্সা করে নিন, ধিমে তালে রিক্সা চলবে গাংপুর গ্রামের অলিগলি ধরে। গ্রাম ছাড়িয়ে মেঠো পথ ধরে আরেকটু এগোতেই দেখতে পাবেন এলোমেলো পাহাড়ি দিগন্ত রেখার গায়ে রূপোলি একটা দাগ, স্টেশন থেকে আট কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসে যখন রিসর্টের সামনে নামবেন, দেখবেন সেই দাগটাই পাহাড়ে ঘেরা এক বিশাল লেক হয়ে গেছে। কলকাতা থেকে রাত সাড়ে দশটায় শুরু করে সকাল সাত’টা সাড়ে সাত’টার ভেতর আপনি বড়ন্তি’তে। আর একেবারে হাওড়া থেকে এই রিসর্ট অবদি যাতায়াতে সাকুল্যে আপনার ২৫০ টাকাও খরচ হবে কিনা সন্দেহ...”

আপনিঃ “ওকে, ওকে, গুড... পৌঁছে গেলাম ধরো, এবার? কদিনে প্ল্যান, কি কি ঘোরার জায়গা?”

আমিঃ “দেখুন, এ জায়গাটার মেইন অ্যাট্রাকশন কিন্তু শান্তি আর নির্জনতা। নিজের সাথে, নিজের কাছের মানুষদের সাথে দু’দন্ড রিল্যাক্স করা। দেখার জায়গা যে কিছু নেই তা না, অজস্র আছে, বড়ন্তির একদিকে বিহারিনাথ পাহাড়, একদিকে পাঞ্চেত ড্যাম, আর খুব কাছেই গড়পঞ্চকোট। তারপর ধরুন, আসানসোলের পথে একটু এগোলেই মাইথন ড্যাম, কল্যানেশ্বরী মন্দির। গাড়ি নিয়ে আসেন যদি তাহলে এ’সব বেড়াতে বেড়াতে দিব্বি দু’টো দিন কেটে যাবে। কিন্তু এ’সবের আগে বিকেলে যখন লেকের জলে হাজার শেডের হলুদ, কমলা আর লাল গুলে দিয়ে সূর্যাস্ত হবে তখন জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন খানিকখন... ভোরবেলা উঠে ছোট্ট একটা ট্রেক করে আসুন সামনের দন্ডাহিত পাহাড় থেকে একজন লোকাল গাইড নিয়ে... রাত হয়ে গেলে দু’চোখ ভরে দেখে নিন আদিবাসী গ্রামের রাত্তির কি অদ্ভূত অন্ধকারে মোড়া, কি অপূর্ব সব শব্দ দিয়ে সাজানো... রিসর্টের বাগানে বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখবেন আকাশের গায়ে আঁচড় কেটে উল্কা চলে গেল... ক্যাম্পফায়ারের আগুনের ধারে বসে জমজমাট ভূতের গল্প করবেন... এ’সব কলকাতায় কোথায় হয় বলুন তো মশাই?”

আপনিঃ “হুম, বুঝলাম... মন্দ লাগছে না শুনে, বুঝলে... তা রিসর্ট বলছো... কেমন রিসর্ট? কি নাম?”

আমিঃ “আমরা ছিলাম যেটায় সেটা সবচে’ পুরোনো আর লেকের সবচে’ কাছে। নাম আকাশমণি। মোটামুটি সব মিলিয়ে ভালোর দিকেই বলবো (লোকেশন, ৫/৫, রাঁধুনির রান্নার হাত, ৫/৫, ঘরের অবস্থা, ৪/৫, বাথরুমের অবস্থা, ৩/৫, বাগানের অবস্থা, ৩/৫, এসি ঘর, বোধহয় নেই, পার্কিং’এর জায়গা, যথেষ্ট আছে, ঘরভাড়া, ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে, সাথে সারাদিনের খাওয়াদাওয়ার জন্য একজনের ২৫০/৩০০ টাকা)। আমার এখানে থেকে ভালোই লেগেছে, তবে ৮০০টাকার ঘরগুলোর আরেকটু মেইন্টেনেন্সের দরকার বলে মনে হয়েছে। আকাশমনি’তে থাকতে হলে ফোন করুন এই নম্বরে +918017215958, বাকি ব্যবস্থা ফোনেই হয়ে যাবে, দেখবেন। ইন ফ্যাক্ট, চারবেলায় কি কি খাবেন সে’সব ফরমায়েসি মেনু’ও আপনার কাছে ফোন করে জেনে নেবেন কেয়ারটেকার নিজে।

তবে এই হোটেল’টি ছাড়াও আরো অনেক হোটেল রিসর্ট আছে। কয়েকটা নাম বলছি, আপনি গুগল করে দেখতে পারেন, পলাশবাড়ি, লেক হিল রিসর্ট, বড়ন্তি ভিলেজ রিসর্ট... এগুলো সবই বেশ ভালো জায়গায় আর ব্যবস্থাও সুন্দর... আপনি শুধু যাওয়া ঠিক করুন আর ফোন করুন, দেখবেন থাকার জায়গা নিয়ে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে না... এ’সব জায়গায় তো আর ট্যুরিস্টের ভিড় নেই...”

আপনি, “বাঃ, বেশ বেশ... আর কিছু... ফাইনাল টিপস...”

আমি, “উমমম... ওখানে গেলে লেকের মাছ অবশ্যই খাবেন, শীতে গেলে ভোরবেলা তখুনি গাছ থেকে নামানো খেজুর রস খাবেন, মাছ ধরা দেখবেন, সূর্যাস্ত কোনো মূল্যে মিস করবেন না, লোকাল ক্র্যাফট (যেমন, ছৌ নাচের মুখোশ) কিনবেন। শুধু ভালো ভালো বলছি, নেগেটিভ দিকগুলোও বলে দি... রাস্তা কিছু জায়গায় কিন্তু বেশ খারাপ থাকতে পারে... আর আমি গিয়েছিলাম জানুয়ারি’তে... অন্যান্য সিজনে যেতে হলে কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে নেবেন... আফটার অল, পুরুলিয়া জেলা, গরমে কিন্তু কষ্ট হতে পারে, সেটা মাথায় রাখবেন... আর কি? এবার একটা প্ল্যান করুন দেখি... দু’দিন একটু ঘুরে আসুন... যখন ফিরে আসবেন, দেখবেন বুক ভরে গেছে তাজা অক্সিজেনে আর ছুটি কাটানোর আনন্দে... সেই রসদ দিয়ে আবার দু’টো মাস অফিসের ঘানি টানা যাবে... তারপর আবার অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে...


ঘুরে এসে আমায় জানাবেন কিন্তু যে কেমন লাগল...”

ওয়ে টু গ্রিন প্যারাডাইস/২

By : Sayantari Ghosh


[প্রথমার্ধের পর...]

-“কুছ পরেশানি হ্যায়?” লোকটা আবার বলল, শান্ত, নিরুত্তাপ গলা, “গাড়ি মে প্রবলেম? হম দেখে ক্যা?”

মাধবী এক মূহুর্ত সময় নিল নিজেকে সামলে নিতে, তারপর বলল, “নহি, গাড়ি নহি, হোটেল...”
- “হমকো গাড়ি মালুম, হোটেল মালুম...একই রকম শান্ত স্বর, “আইয়ে হামারে সাথ... হম লেকে চলেঙ্গে...”
- “পতা হ্যায় আপকো? হোটেল গ্রিন প্যারাডাইস?”
- “হাঁ জি... আইয়ে হামারে সাথ... হম লেকে চলেঙ্গে আপকো...

মূহুর্তের মধ্যে একজোট হয়ে গেল ওরা সকলে!

-“তাই নাকি! বড়িয়া হ্যায় ভইয়া!”
- “ভগবান নাকি ভাই তুমি! উফফ, কি বাঁচাটাই না বাঁচালে!”
-“নিসার, মিতালী জলদি আয়, থ্যাঙ্কু ভাই... অনেক অনেক থ্যাঙ্কু!”

পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দিল মানিক, “বহোত সুক্রিয়া...”... লোকটা কিন্তু টাকা নিল না, “হামকো পেরাডাইস হোটেল মালুম... চলিয়ে... পঁহুচকে প্যায়সা দেনা...”
-“গ্রিন প্যারাডাইস...”
-“হাঁ জি... গাড়ি স্টার্ট কিজিয়ে..”
-“আপ ফ্রন্ট সিট মে আ জাইয়ে” লোকটাকে ডাকলো মানিক।
-“নহি সাব, হম বাহার হ্যায় সাব, আপ চলিয়ে...” বলে লোকটা মাধবীর পাশের জানলাটা হাতে করে ধরে ফুটরেস্টের ওপর উঠে পড়লো। মানিক উঠে পড়ল ড্রাইভিং সিটে, গাড়ি ছেড়ে দিল। জানলার কাঁচ একটু খোলা, লোকটার মুখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না আর, কিন্তু কথা পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে...

-“সিধা চলিয়ে... অব বাঁয়ে... চলিয়ে... সিধা... হাঁ জি... ডাঁয়ে মুড়িয়ে আগে সে...”

ডাইনে... বাঁয়ে... ডাইনে... বাঁয়ে...  গাড়ি চলেছে লোকটার নির্দেশমত... রাস্তা খুব একটা সরু নয় এদিকে, কিন্তু বেশ ভাঙাচোরা... হেডলাইটের আলোটা মাতালের মত টলতে টলতে চলেছে যেন। এদিকটায় ওরা আগেরবার আসেনি। লোকটা সত্যিই রাস্তা’টা চেনে, ওর কথায় কোনো জড়তা কোনো দ্বিধা নেই!

-“অভি সামনে চলিয়ে... হাঁ জি... ইয়ে আগে সে রাইট...”

বেশ তাড়াতাড়ি এগোচ্ছিল ওরা। জানলার কাঁচের ফাঁকটুকু দিয়ে তীরের ফলার মত শিরশিরে হাওয়া ঢুকছে। মাধবীর চোখ বুজে আসছিল ক্লান্তিতে... উফ... আর একটু... তারপরেই গরম ঘর... নরম বিছানা...

-“সামনে’সে অউর এক টার্ন বাবুজি... লেফট... উয়ো আ গয়া আপকা গিরিন প্যারাডাইস...” বলল লোকটা। 

আর তখুনি মাধবীর মনে হল জানলার বাইরে থেকে লোকটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে! যেন উড়ে যাচ্ছে এক টুকরো কাগজের মত, যেন একটা ছবি হয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে জানলার বাইরে দিয়ে, এক চিলতে নিষ্ঠুর হাসি লেগে আছে যেন সেই ছবিটার ঠোঁটের কোণে। ব্যাপারটা বুঝে উঠে মাধবীর কিছু বলার আগেই মানিক স্টিয়ারিং ঘোরালো বাঁদিকে... আর সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রচন্ড শব্দ, তোলপাড় ঝাঁকুনি আর ঘষটে যাওয়া চাকার তীব্র আর্তনাদ! মনে হল পৃথিবী আর আকাশ একসাথে তালগোল পাকিয়ে গেল যেন। মাধবীর কপাল’টা খুব জোরে ঠুকে গেল কিছু’তে, ও শুধু বুঝতে পারল একটা ভীষণ অঘটন ঘটে গেছে, গাড়ি’টা খাদের ঢাল বরাবর পিছলে চলেছে নিচের দিকে, অভিকর্ষ ছাড়া আর কারো কথা শুনছে না! ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল ও!

*****

এক মিনিট বাদে যখন চোখ খুললো গাড়ি’টা একটা বড় গাছের গায়ে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে। যে রাস্তা’টা দিয়ে ওরা যাচ্ছিল, সেটা দেখাই যাচ্ছে না কোথাও আর!

-“সবাই ঠিক আছিস?” সোহমের গলা। নিসার পিছনের সিট থেকে সাড়া দিল একটা হালকা গোঙানি’তে, মিতালী তখনও মাধবীর হাত’টা আঁকড়ে ধরে আছে। মানিকের কপাল থেকে দরদর করে রক্ত পড়ছে।

আস্তে আস্তে দরজা খুলে মাধবী নেমে এল গাড়ি থেকে। রাস্তা’টা এবার দেখা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে যে প্রায় পনের-কুড়ি ফুট উপর থেকে সটানে নিচে পড়েছে গাড়ি’টা। দেওদার গাছ’টার গায়ে হেলান দিয়ে তিরিশ ডিগ্রি কোণে ঝুলে আছে খাদের দিকে মুখ করে। পাশেই পড়ে আছে “রোড এন্ড্‌স হিয়ার” লেখা একটা তুবড়ে যাওয়া সাইনবোর্ড, বোঝা যাচ্ছে গাড়ির ধাক্কা’তে সেটিও ওদের সাথেই রাস্তা ছেড়ে এখানে এসে পড়েছে। সামনে এক ফুটের পরেই ঝুপ করে নেমে গেছে অন্ধকার অতল পাইনের সারি। ওরা যে ওই খাদে তলিয়ে যায় নি, এখনও বেঁচে আছে সেটাই আশ্চর্যের!

-“সবাই ঠিক আছিস তো?” সোহম আবার প্রশ্ন’টা করলো। এক এক করে সকলেই নেমে আসছে তখন গাড়িটার থেকে।

-“গাইড’টা কোথায় গেল? গাইড’টা?”

মাধবী কিছু বলতে পারল না। লোকটা ওর চোখের সামনে সত্যিই কি মিলিয়ে গেল হাওয়ায়?? ঠিক দেখেছিল কি ও? না কি চোখের ভুল? কে জানে...

****

একে অপরের হাত ধরে যেন একটা ঘোরের মধ্যে ওরা সেই গভীর রাতে পাহাড় ভেঙে উপরে উঠে এল। ভাঙাচোরা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সদ্য হয়ে যাওয়া অ্যাক্সিডেন্টের ছাপ...  উপড়ে যাওয়া সাইনবোর্ড’টার লোহা, গাড়িটার ছোটখাটো এক-দুটো খুলে পড়া পার্টস... হোঁচট খেতে খেতে ওরা হাঁটা দিল ফিরতি পথে, মোবাইলের নিবু নিবু আলো’তে সদ্য আসা গাড়ির টায়ারের দাগ দেখে হাঁটতে থাকলে ভোররাতের আগে পৌঁছে’ই যাবে নিশ্চয়ই বাজার এলাকাটায়।

ওরা হাঁটছিল, কিন্তু কারো মুখে কোনও কথা ছিল না। সকলেই বোধহয় ব্যস্ত নিজের মত করে ধাঁধাটার উত্তর খুঁজতে। মনের ভেতর হাজারটা প্রশ্ন উত্তাল হয়ে উঠছে প্রতি মূহুর্তে... কে ছিল লোক’টা? কোথায় উবে গেল হঠাত্‌? চোর-ডাকাত হলেও হয়তঃ এর থেকে সহজ হত ব্যাপার’টা বোঝা। কেন কয়েকজন ট্যুরিস্ট’কে বাজারের মাঝখান থেকে এই শেষ হয়ে যাওয়া রাস্তায় টেনে এনে খাদে ফেলে দিতে চাইল? পাগল কি? না কি ফ্রাস্ট্রেটেড নেশাখোর মাতাল কোনো? উন্মাদ কোনো খুনি? না কি আরো অবিশ্বাস্য অভাবনীয় কিছু?

ওরা হাঁটছিল। মাঝেমাঝে চোটের ব্যথা জানান দিয়ে যাচ্ছিল, মাঝেমাঝে নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল গা ছমছমে ভয়। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। আকাশে এক ফোঁটা মেঘ নেই। চাঁদ উঠছে আস্তে আস্তে। খাদের মধ্যেকার অতলান্ত সবুজ পাইনের জঙ্গল থেকে হু হু করে উল্মাদ হাওয়া ছুটে চলেছে। যেন একসাথে মাথা দুলিয়ে অট্টহাসি হাসছে শয়তানের শাগরেদের দল, “হম লেকে চলেঙ্গে আপকো... উয়ো আ গয়া আপকা গিরিন প্যারাডাইস...”

[শেষ]

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -