Popular Post

Posted by : Sayantari Ghosh Wednesday, May 25, 2016



মাঝেমাঝে উইকএন্ড’গুলো ঘরে বসে থাকতে হবে ভেবে আপনার গায়ে জ্বর আসে না? আমার তো প্রায়শঃই আসে! বিশেষতঃ যদি তার সাথে একটা সোমবার পনেরই অগাস্ট পড়ে যায়, বা শুক্কুরবার’টা হয় গুড ফ্রাইডে। আমার তো ভাই তেমন হলে মাথা দপদপ, কান কটকট, হাত নিশপিশ সব একসাথে হতে থাকে। পড়াশোনা করতে বসলেই ব্যাগ গোছাতে ইচ্ছে করে, পুরোনো বেড়াতে যাওয়ার ছবিগুলো দেখলেই কান্না পায়, ইন্টারনেট খুললেই হাত চলে যায় ইন্ডিয়ান রেলওয়েজের ওয়েবসাইটের দিকে। বুকের ভেতর নানারকম প্রশ্ন খচরমচর করে, “কোথায় টিকিট আছে দেখি? কবে যাওয়া যায়? কবে ফেরা যায়? থাকবো কোথায়?” আরো কত কি!

আমি তাই যখন-তখন বেরিয়ে পড়ি পিঠে ব্যাগ নিয়ে, সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বা বাড়ির কাউকে জুটিয়ে নিই। তো এরকমই একটা উইকএন্ডে আমরা ঘুরে এলাম বড়ন্তি। নেক্সট ছুটি’তে যদি আপনার ইচ্ছে হয়, তাই ডিটেইলগুলো ব্লগে তুলে রাখছি। যদি আপনাদের কারো কাজে লেগে যায়...

এবার আপনি বলবেন, “কেন যাবো বড়ন্তি? সেখানে আছে’টা কি?”

আমি বলব, “আপনার গ্রাম ভালো লাগে? মেঠো আলপথ, লালমাটির ধূলোওড়া রাস্তা, পরিষ্কার আকাশ, খোলা হাওয়া, অন্ধকার রাতের আকাশে একটা-দুটো করে উল্কা? তার সাথে জুড়ে নিন ছড়ানো-ছেটানো পাহাড়, টিলা, শিমুল-পলাশের জঙ্গল আর একখানা বি-শা-ল লেক। নির্জন, ছিমছাম, নির্ঝঞ্ঝাট। কলকাতার হট্টগোল থেকে দুটো দিন নিজেকে ছুটি দিতে ইচ্ছে করলে আপনার এ জায়গা ভালো লাগবে আমার মনে হয়...”

এবার আপনি, “জায়গাটা কোথায় বল তো?”

আমি, “মুরাডি চেনেন? যেখানে খুব বড় একটা চোখের হাসপাতাল আছে? চেনেন না? আমি বলে দিচ্ছি। আসানসোল চেনেন তো? বড়ন্তি আসানসোল থেকে ৪০ কিলোমিটার মোটামুটি। একটা উইকএন্ড কাটিয়ে আসার পক্ষে কলকাতা থেকে বড়ন্তির দূরত্ব’টা কিন্তু এক্কেবারে আইডিয়াল।
ধরুন, যদি কলকাতা থেকে যান তাহলে দু’ভাবে যেতে পারেন। এক, আপনি চাপতে পারেন আসানসোল যাওয়ার যে কোন ট্রেনে। আসানসোলে নেমে চেপে পড়ুন আদ্রা লাইনের যে কোনো লোকালে, চতুর্থ স্টেশন মুরাডি, আধ-ঘন্টার রাস্তা। আবার অন্য আরেকটা উপায় হল শুক্কুরবার অফিস সেরে এসে আপনি রাত্তিরে ধরে নিতে পারেন হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। ভোর পাঁচটায় নামবেন আদ্রা। এক কাপ চা খেয়ে আসানসোল লাইনের লোকাল ট্রেন ধরুন, এদিন থেকেও চার নম্বর স্টেশন মুরাডি। আমার মতে দ্বিতীয়’টা আপনার পক্ষে বেটার অপশন। তাতে সময় বাঁচবে। তবে যদি আসানসোল বা আদ্রা থেকে দু’দিনের জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়তে চান, তা হলে আপনার আসানসোল হয়ে যাওয়াই ভালো, আদ্রায় অত গাড়ি পাবেন না।

আপনি, “মুরাডি, আদ্রা, জায়গাগুলোর নাম শুনিইনি আগে কখনও...”

আমি, “হেঃ হেঃ হেঃ... জয়চন্ডী পাহাড়ের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? হীরক রাজার দেশের অনেকখানি শুটিং হয়েছে কিন্তু এই এলাকায়, সেই পাহাড়ে মাস্টারমশাইএর লুকিয়ে থাকার জায়গাটা মনে আছে তো? দেখবেন, দেখলেই চিনে ফেলবেন। আদ্রার দিক থেকে এলে জয়চন্ডী পাহাড় স্টেশনটাও পেরোবে, অনেকে ট্রেকিং করতে আসে এই পাহাড়ে... ট্রেন থেকেই দেখতে পাবেন...

ট্রেন থেকে নেমে দেখবেন, মুরাডি স্টেশন’টা চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে যেন। কোন ব্যস্ততা নেই কোথাও। নেমে পড়ে একটা রিক্সা করে নিন, ধিমে তালে রিক্সা চলবে গাংপুর গ্রামের অলিগলি ধরে। গ্রাম ছাড়িয়ে মেঠো পথ ধরে আরেকটু এগোতেই দেখতে পাবেন এলোমেলো পাহাড়ি দিগন্ত রেখার গায়ে রূপোলি একটা দাগ, স্টেশন থেকে আট কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসে যখন রিসর্টের সামনে নামবেন, দেখবেন সেই দাগটাই পাহাড়ে ঘেরা এক বিশাল লেক হয়ে গেছে। কলকাতা থেকে রাত সাড়ে দশটায় শুরু করে সকাল সাত’টা সাড়ে সাত’টার ভেতর আপনি বড়ন্তি’তে। আর একেবারে হাওড়া থেকে এই রিসর্ট অবদি যাতায়াতে সাকুল্যে আপনার ২৫০ টাকাও খরচ হবে কিনা সন্দেহ...”

আপনিঃ “ওকে, ওকে, গুড... পৌঁছে গেলাম ধরো, এবার? কদিনে প্ল্যান, কি কি ঘোরার জায়গা?”

আমিঃ “দেখুন, এ জায়গাটার মেইন অ্যাট্রাকশন কিন্তু শান্তি আর নির্জনতা। নিজের সাথে, নিজের কাছের মানুষদের সাথে দু’দন্ড রিল্যাক্স করা। দেখার জায়গা যে কিছু নেই তা না, অজস্র আছে, বড়ন্তির একদিকে বিহারিনাথ পাহাড়, একদিকে পাঞ্চেত ড্যাম, আর খুব কাছেই গড়পঞ্চকোট। তারপর ধরুন, আসানসোলের পথে একটু এগোলেই মাইথন ড্যাম, কল্যানেশ্বরী মন্দির। গাড়ি নিয়ে আসেন যদি তাহলে এ’সব বেড়াতে বেড়াতে দিব্বি দু’টো দিন কেটে যাবে। কিন্তু এ’সবের আগে বিকেলে যখন লেকের জলে হাজার শেডের হলুদ, কমলা আর লাল গুলে দিয়ে সূর্যাস্ত হবে তখন জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন খানিকখন... ভোরবেলা উঠে ছোট্ট একটা ট্রেক করে আসুন সামনের দন্ডাহিত পাহাড় থেকে একজন লোকাল গাইড নিয়ে... রাত হয়ে গেলে দু’চোখ ভরে দেখে নিন আদিবাসী গ্রামের রাত্তির কি অদ্ভূত অন্ধকারে মোড়া, কি অপূর্ব সব শব্দ দিয়ে সাজানো... রিসর্টের বাগানে বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখবেন আকাশের গায়ে আঁচড় কেটে উল্কা চলে গেল... ক্যাম্পফায়ারের আগুনের ধারে বসে জমজমাট ভূতের গল্প করবেন... এ’সব কলকাতায় কোথায় হয় বলুন তো মশাই?”

আপনিঃ “হুম, বুঝলাম... মন্দ লাগছে না শুনে, বুঝলে... তা রিসর্ট বলছো... কেমন রিসর্ট? কি নাম?”

আমিঃ “আমরা ছিলাম যেটায় সেটা সবচে’ পুরোনো আর লেকের সবচে’ কাছে। নাম আকাশমণি। মোটামুটি সব মিলিয়ে ভালোর দিকেই বলবো (লোকেশন, ৫/৫, রাঁধুনির রান্নার হাত, ৫/৫, ঘরের অবস্থা, ৪/৫, বাথরুমের অবস্থা, ৩/৫, বাগানের অবস্থা, ৩/৫, এসি ঘর, বোধহয় নেই, পার্কিং’এর জায়গা, যথেষ্ট আছে, ঘরভাড়া, ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে, সাথে সারাদিনের খাওয়াদাওয়ার জন্য একজনের ২৫০/৩০০ টাকা)। আমার এখানে থেকে ভালোই লেগেছে, তবে ৮০০টাকার ঘরগুলোর আরেকটু মেইন্টেনেন্সের দরকার বলে মনে হয়েছে। আকাশমনি’তে থাকতে হলে ফোন করুন এই নম্বরে +918017215958, বাকি ব্যবস্থা ফোনেই হয়ে যাবে, দেখবেন। ইন ফ্যাক্ট, চারবেলায় কি কি খাবেন সে’সব ফরমায়েসি মেনু’ও আপনার কাছে ফোন করে জেনে নেবেন কেয়ারটেকার নিজে।

তবে এই হোটেল’টি ছাড়াও আরো অনেক হোটেল রিসর্ট আছে। কয়েকটা নাম বলছি, আপনি গুগল করে দেখতে পারেন, পলাশবাড়ি, লেক হিল রিসর্ট, বড়ন্তি ভিলেজ রিসর্ট... এগুলো সবই বেশ ভালো জায়গায় আর ব্যবস্থাও সুন্দর... আপনি শুধু যাওয়া ঠিক করুন আর ফোন করুন, দেখবেন থাকার জায়গা নিয়ে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে না... এ’সব জায়গায় তো আর ট্যুরিস্টের ভিড় নেই...”

আপনি, “বাঃ, বেশ বেশ... আর কিছু... ফাইনাল টিপস...”

আমি, “উমমম... ওখানে গেলে লেকের মাছ অবশ্যই খাবেন, শীতে গেলে ভোরবেলা তখুনি গাছ থেকে নামানো খেজুর রস খাবেন, মাছ ধরা দেখবেন, সূর্যাস্ত কোনো মূল্যে মিস করবেন না, লোকাল ক্র্যাফট (যেমন, ছৌ নাচের মুখোশ) কিনবেন। শুধু ভালো ভালো বলছি, নেগেটিভ দিকগুলোও বলে দি... রাস্তা কিছু জায়গায় কিন্তু বেশ খারাপ থাকতে পারে... আর আমি গিয়েছিলাম জানুয়ারি’তে... অন্যান্য সিজনে যেতে হলে কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে নেবেন... আফটার অল, পুরুলিয়া জেলা, গরমে কিন্তু কষ্ট হতে পারে, সেটা মাথায় রাখবেন... আর কি? এবার একটা প্ল্যান করুন দেখি... দু’দিন একটু ঘুরে আসুন... যখন ফিরে আসবেন, দেখবেন বুক ভরে গেছে তাজা অক্সিজেনে আর ছুটি কাটানোর আনন্দে... সেই রসদ দিয়ে আবার দু’টো মাস অফিসের ঘানি টানা যাবে... তারপর আবার অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে...


ঘুরে এসে আমায় জানাবেন কিন্তু যে কেমন লাগল...”

{ 1 comments... read them below or add one }

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -