Popular Post

Archive for 2012

ফান টু সি

By : Sayantari Ghosh



আজ আতস কাচটাকে তাক থেকে পাড়ার আগে আসুন ভাবা যাক কয়েকজনের কথা;তাদের আমরা দৈনন্দিনে দেখি বটে, কিন্তু খুব যে একটা খেয়াল করি, খুব যে একটা ভাবতে বসি তাদের কথা, খুব যে কিছু করতে চাই তাদের জন্যে, তা নয়।ঘটনাচক্রে, আজ যাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি, তারা সকলেই নারী, প্রত্যেকেই বিবাহিতা, তবে না, আপনি যা ভাবছেন তা নয়, তারা শ্বশুরবাড়িতে লাঞ্ছিতা নন, কেউ তাদের গায়ে হাত তোলে নি, কেউ তাদের খাদ্য-বস্ত্রের সংস্থান নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ দেন নি, মা-বাবা পণ দিতে পারেনি বলে কেউ তাদের গায়ে আগুন দিতে আসে নি বা পরপর তিনবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার অপরাধে তারা অপরাধীও নন।অর্থাৎ সেদিক দিয়ে ভাবতে গেলে তারা নিগৃহিতা বা অত্যাচারিতা নন, এমন একটা ধারণাই আপনি-আমি পোষণ করে থাকি।আসুন, একবার দেখি তারা কেমন আছেন?

১   প্রথমে কল্পনা করুন এমন একটা ছবি, যেখানে রয়েছেন এক পঞ্চাশোর্ধ দম্পতি।স্ত্রী তার স্বামীর হাতে তুলে দিচ্ছেন নিজের সাধের গয়নার বাক্সখানা আর স্বামীও গদগদ আপ্লুত মুখে বলছেন, “দাও, দাও, এ’সব আর তোমায় তেমন মানায়ও না...” মজার ব্যাপার হল, যে আপনার সাধারণ ভাবে মনে হবে,গয়নার বাক্স স্বামীর কোনো জরুরী দরকারে কোথাও বন্ধক রাখার কাজে দিচ্ছেন হয়তঃ ভদ্রমহিলা, কিন্তু সে রকম কিছু মোটেও না, উনি ওগুলো দিচ্ছেন স্বামীর বছর পঁচিশেকের নতুন প্রেমিকার জন্যে...!......কেন বলুন তো?......শুধু এই আশায় যে যদি এই সুযোগে, তাঁর এতবড় স্বার্থত্যাগের নজির দেখে স্বামী তাকে একটুখানি ভালো আবার করে বেসে ফেলেন কোনো ফাঁকে......কোনোভাবে যদি...

২  এবার, ভাবুন এ’রকম একটা দৃশ্য, যেখানে স্বামী যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কাজে, তখন সারাদিনের জন্য একটা হিংস্র, মানুষখেকো পাখি’কে রেখে যান সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী এর পাহারায়...!‘ভালোবাসি, তাই সুরক্ষা দিতে চাই’ এই হয় এই দৈনন্দিন পাহারার অজুহাত।পাখিটা মাথার ওপর গন্ডি কাটে, হাড়-হিম-করা চিতকার করে ডাকে আর গন্ডির বাইরে পা বাড়ালেই মাংস খুবলে খেতে চায়......স্বামী কিন্তু তখনও বলেন, ‘ভালোবাসি, তাই সুরক্ষা দিতে চাই’...

৩  তৃতীয় দৃশ্যে চলে আসি, আসুন।ছবিটায় আছেন এক আধুনিকা অর্ধাঙ্গিনী।সে স্বাধীনচেতা, শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী, স্বাবলম্বী।যেহেতু সে কথায় কথায় স্বামীর পায়ে লুটিয়ে পড়তে পারে না, যেহেতু সে পায়ের কাছে কাদা হয়ে পড়ে থাকতে শেখে নি, তাই বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তার এই কোমলতাহীন সৌন্দর্য্য স্বামীকে টানে না আর।যুদ্ধে তছনছ হয়ে যাওয়া দেশ ছেড়ে আত্মরক্ষার আশ্রয় খুঁজে নিয়ে বেরিয়ে পড়ার সময় স্বামীর মনেই থাকে না মেয়েটির কথা!তিনি ভুলেই গেছেন তখন সাগ্নিক সপ্তপদীর শপথগুলো।মেয়েটি বেপরোয়া হয়ে পড়ে।কখনও অস্ত্র হাতে তুলে দুনিয়ার কাছে প্রমাণ করতে চায় নিজের যোগ্যতা, কখনো বা অযোগ্য কারো সাথে প্রেমের ভনিতায় প্রমাণ করতে চায় স্বামীর কাছে যে তার প্রেমে এখনও কেউ পড়তে পারে...এ কি খালি স্বামীর কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা?জগত সংসারের কাছে প্রমাণ করার বাসনা?না কি নিজের কাছেও......

৪  শেষ দৃশ্য।ভয়ানক দৃশ্য।ভাবুন, জাস্ট ভাবার চেষ্টা করুন একটি এমন মেয়ের কথা, যার স্বামী ঘুমিয়ে আছে...!জীবিত, শ্বাস প্রশ্বাস চলছে, জেগে ওঠে এক বছরে একবার...উঠে স্বামীসুলভ সব অধিকার সব জোরজুলুম একবার ফলিয়ে নেয় স্ত্রী’র ওপরে।একদিন জেগে থাকে।একটা দিন।তারপর আবার কালঘুম...এক বছর আবার সব চুপচাপ.........

চরিত্রগুলোকে চিনতে পারলেন?চেনা-চেনা লাগলো, ভালোবাসার নামে, ‘বিবাহ’ নামক প্রহসনের নামে, ‘পতি পরম গুরু’ স্লোগানের আস্ফালনে অন্ধকুঠুরিতে বন্দিনী এই মেয়েগুলোকে?কি বললেন?আমাদের আশেপাশেই দেখেছেন মনে হল?ঠিক বলেছেন!তবে কি জানেন, আমার সাথে এদের দ্যাখা হল অন্যভাবে।

দেখতে গেছিলাম ‘সুন্দরম’এর নাটক ‘আশ্চৌর্য ফান্টুসি’।আর ওই দু’ঘন্টায় খুচরো হাসির ফাঁকতালে ভীষণ ভাবে খেয়াল করতে বাধ্য হলাম যে, মহাকাব্যের আড়ালে, যাকে বলে টাইম ইম্মেমোরিয়াল, সেই তবে থেকে ওরা ছিল আমাদের পাশেই।আমরাই কে জানে কি করে এতদিন খেয়াল করি নি।রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী, মহাকাব্যের নায়িকা সীতা, বিভীষণের স্ত্রী সরমা আর কুম্ভকর্ণের স্ত্রী বজ্রমালা।ওরা ছিল।আমরা দেখি নি।আর তাইই হয়তঃ ওরা আজো রয়ে গেছে।

তবে এখানেই থামেন নি নাট্যকার।ওদের এই ভালো-থাকার সমস্যার একটা বিহীত করতে টেনে এনেছেন হনুমতী’কে!আজ্ঞে না, একে পাবেন না মহাকাব্যে।কিন্তু সেদিনের নাটকের বক্তদ্যটাই ছিল এ’রকম।যদি ধরুন, হনুমানের বদলে কোনো এক হনুমতী যেত সীতার কাছে রামের অঙ্গুরীয় নিয়ে?তা’হলে?তা’হলে কি রামায়ন লেখা হত একই ভাবে?

এই বদলটুকুর কারণে নাটকের নাম, ‘আশ্চৌর্য ফান্টুসি’।ভেঙে ভাবতে গেলে দাঁড়ায় আশ্চর্য চৌর্য আর ফান্টুসির সন্ধি-বিচ্ছেদে ফান-টু-সি।অর্থাৎ কি না যে অবাক করা চৌর্যবৃত্তি দেখতে ভারী মজা।বাল্মীকি রামায়নের গল্পের এমন সার্থক চৌর্যবৃত্তিকে স্বাগত!দু-ঘন্টার জমজমাট গানে গানে ভরা চিত্রনাট্য।‘ও আকাশ’, ‘আমি কবে হবো আমার’ এই গানগুলো নাটক শেষ হওয়ার অনেক পর পর্যন্ত কানে লেগে থাকে।নাটকটির চিত্রায়ণ গ্রামবাংলার পালাগানের সাথে মিল রেখে।এই বাঙালিয়ানা আর folk-মেজাজ আপাদমস্তক দূর্ধর্ষ।জয় সেনের পাপেট আর আলোর কাজ অনবদ্য।গানের সুর করেছেন ভূমি’র সৌমিত্র রায়।আর গানের কথা স্বয়ং নাট্যকার-কাম-নির্দেশকের।

সেদিন আকাদেমি থেকে মন ভর্তি করে রঙীন বুদবুদ সামলে আনতে আনতে তুলট কাগজের ধূলোটে মহাকাব্যটিকে নতুন করে চিনলাম যেন।সত্যি করে ভাবতে গেলে, হনুমানের পক্ষে খেয়াল করা সত্যিই মুশকিল যে আপাতসুখী সোনার লঙ্কা জুড়ে এতগুলো মেয়ে মোটেই ভালো নেই।খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাব না থাকলেও তাদের জীবনে কতগুলো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের হাহাকার চলছে।যেমন, যথাযোগ্য সম্মান, খানিকটা মর্যাদা, একটুখানি ভালোবাসা।এই সত্য আবিষ্কারের জন্য একটি হনুমতীরই প্রয়োজন।যে কোনো বাধা মানে না।পাহাড়ী ঝর্ণার মত যে মুক্ত।যে কারো দাসী হতে শেখে নি।যা ঠিক বলে বোঝে, তাই করে।এমন একটি লক্ষ্মীছাড়া, বিশ্ববখাটে, অবাধ্য মেয়েই পারে ওদের’কে নিয়ে নতুন দেশের দিকে নাও ভাসাতে।

মনোজ মিত্র যে কেন বাংলা নাটকের লেজেন্ড, তা এতদিনে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।


পুষ্পপুরাণঃ পারিজাত

By : Sayantari Ghosh


পারিজাত...
সে তো মর্ত্যের নয়। স্বর্গের ফুল... গোলোকে বিষ্ণুর সোনার সিংহাসনের আকাশ সুগন্ধে মাতিয়ে রাখে... আর কারণে-অকারণে পায়ের কাছে ঝরে পড়ে পড়ে ধবধবে গালিচা বিছিয়ে দেয়... তাই তো অমন নাম... পারিজাত...!
পারিজাতকে মর্ত্যে আনার কাজটি করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ... করেছিলেন বললে ভুল হবে... একরকম করতে বাধ্য হয়েছিলেন...!!
শুনেই চমক লাগল বুঝি...? ভাবছো,শ্রীকৃষ্ণ তো স্বয়ং বিষ্ণুর অবতার... কত কি কঠিন কঠিন কাজই না করে গেছেন তিনি... তাঁকে বাধ্য হতে হল... এ অসম্ভব কাজটি করল কে???
কে আবার...? তাঁর দুই রাণী... রুক্মিনী আর সত্যভামা...!
সে গল্পটির শুরুও ঝগড়াঝাঁটি দিয়ে... সেই একই ঝগড়া... কে বড়...? যার আসল মানে হল, শ্রীকৃষ্ণের সকল রাণীর মধ্যে প্রিয়তমা কে? সত্যভামা? না কি রুক্মিনী?
দুজনেই জোর গলায় রাজ্যের সব রকমারী দাবী করতে লাগলেন...
একজন বলেন,তাঁর বলার অপেক্ষা... কৃষ্ণ গজদন্তের প্রাসাদ গড়িয়ে দেবেন একরাত্তিরের মধ্যে...
আর একজন বলেন,তাঁর মুখের কথা খসলেই কৃষ্ণ একশ পক্ষীরাজে টানা রথ এনে দাঁড় করিয়ে দেবেন দুয়োরের পাশে...
এমনি করে কথায় কথায় কথা বেড়ে বেড়ে পাহাড়প্রমাণ হয়ে গেল...
খবর পেয়ে কৃষ্ণ যখন এসে পৌঁছোলেন,তখন সেসব দাবীর বহর মর্ত্যলোক ছাড়িয়ে দেবলোকে উঁকিঝুঁকি মারছে...!
দুজনেই এসে চোখে কাজলজল উজাড় করে,মুখভার করে বললেন,
যদি ওকে চাও ওর কাছে থাকো,আমি তবে ছাড়ি হাত...
আর,
যদি ভালোবাসো তবে এনে দাও স্বর্গের পারিজাত...
সব্বোনাশ!! শুনেই তো শ্রীকৃষ্ণের চক্ষু চড়কগাছ! স্বর্গের পারিজাত!!! তাকে পৃথিবীতে আনাই তো মহাশক্ত কাজ! এনে দাও বললেই তো আর তার এনে দেওয়া যায়না... তার উপর এনে দেবেনই বা কাকে? রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে তো আরেকদিকে... আর তার চেয়েও বড় কথা, প্রাণের ভয় বলেও তো একটা বস্তু আছে কৃষ্ণঠাকুরের...!
ভাবনায় ঘুম উড়ে গেল শ্রীকৃষ্ণের চোখের পাতা থেকে... রাতভর ঘুম আসেনা... কি করেন... কি করেন... কি করে সামলানো যায় দুজনকে...
শেষমেশ অনেক ভেবে ভোররাতের দিকে এক দারুণ ভাবনা ঝিলিক দিয়ে উঠল... একগাল হেসে শ্রীকৃষ্ণ চললেন পারিজাত আনতে।
**********************************************************************
ভোরবেলা, ঘুম ভেঙে সত্যভামা দেখলেন যে তাঁর আঙিনার দক্ষিণকোণের পাঁচিলধার আলো করে রয়েছে অ-পূ-র্ব এক অজানা ফুলের গাছ... সারা প্রাসাদ ম ম করছে স্বর্গীয় সুরভিতে...
আর পাঁচিলের ও'ধারে, রুক্মিনীর উঠোনের উত্তরকোণের শিশিরভেজা ঘাস জুড়ে বিছিয়ে আছে সাদার উপর ছোট্ট ছোট্ট কমলা ফুটকি দেওয়া একখান নরম গালিচা...

পুষ্পপুরাণঃ কেতকী

By : Sayantari Ghosh

আচ্ছাবল দেখিনিকেতকী ফুলে পুজো হতে দেখেছো কখনও...? অথচ অমন গন্ধ কটা ফুলের আছে বল তো? তবুও কেন এরকম...?  হু হু... বাবা... গল্প আছে, গল্প... বসেই তো আছো দেখচি... শুনবে না কি...?
তাহলে বলি...?
ব্যাপারটা হল গিয়ে সে একবারের কথা... হঠাএকদিন সকালে মহাদেবের ঘুম ভাঙল মহা-চিত্কার চেঁচামেচিতে... চোখ রগড়ে দ্যাখেন কি,না,ব্রহ্মাঠাকুর আর বিষ্ণুঠাকুরের মধ্যে সাঙ্ঘাতিক ঝামেলা বেঁধেছে... দিনের কাজকর্ম কিচ্ছু শুরু হয়নি... ঝগড়ায় বিশ্বদুনিয়া সব তোলপাড়,তটস্থ...!!

কি হয়েছে?  না, সেই পুরোনো সমস্যা... কে বড়,কার দরকার বেশি,সেই নিয়ে মনকষাকষি... তারপর একদুটো রাগারাগির কথা... বাড়তে বাড়তে সমস্যা এখন তুঙ্গে...!!
মহাদেব বুঝলেন তাঁকে ছাড়া গতি নেই... দুজনেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন,যুক্তির থেকে উপরে গলা তুলেছে অযৌক্তিক সব কথা... একটা তুলনা করে দুজনকে বুঝিয়ে দিতে হবে,দুজনেই সমান... এ’ছাড়া উপায় নেই...
যেই ভাবা সেই কাজ। সটান গিয়ে দাঁড়ালেন দুজনের মাঝে...বললেন শান্ত হোন আপনারা...পরীক্ষা করেই দেখা যাক না,কে বড়...
মূহুর্তের মধ্যে দুই দেবতার মাঝে দাঁড়ানো মহাদেব একখানা বি-শা-আ-আ-ল আলোর স্তম্ভ হয়ে গেলেন... আকাশ জুড়ে গমগম করে উঠল তাঁর কন্ঠস্বর...
একজন উর্ধ্বপানে,একজন অধোপানে যান,
যে আগে পাবেন শেষ, তার জয় ... করুন প্রস্থান...
ব্যাস... আর পায় কোথায়...?  তক্ষুনি দু’জনে দু’দিকে লাগালেন ছুট...!!!

বিষ্ণু যাচ্ছিলেন পাতালের দিকে... আলোর স্তম্ভের পাশে পাশে চললেন,চললেন আর চললেন... কিন্তু শেষ কোথায়...? যতদূর চোখ যায় সে আলো আগে, আরো আগে এগিয়ে গেছে... বিষ্ণুর জোরে জোরে শ্বাস পড়তে লাগল... হাঁফিয়ে গেলেন একেবারে... নাঃ! আর পারা যায় না... এ আলেয়ার পিছু করার চেফিরে যাওয়াই ভালো... এ নির্ঘাত্‌ মহাদেব কিছু ফন্দি ফেঁদেছেন...! আর দেরী না করে ফেরার পথা পা বাড়ালেন বিষ্ণু।
দিকে ব্রহ্মার অবস্থাও তথৈবচ! হাঁফিয়ে-ঝাঁপিয়ে ঘেমে-নেয়ে গেছেন... কি করবেন ভাবছেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে,হঠাৎ দ্যাখেন ফুলের রানী কেতকী উপর থেকে হাওয়ায় ভেসে ভেসে নেমে আসছে। ব্রহ্মার মাথায় এক দুষ্টুবুদ্ধি চাপলো। কেতকীকে খপ করে ধরে বললেন, “চল আমার সাথে,বিষ্ণুকে বলবে যে তোমায় আমি এই আলোর স্তাম্ভের শিখর থেকে নিয়ে এসেছি...
ভয় পেয়ে কেতকী বলতে গেল বাধা দিয়ে, “ওমা,সে কি??!  কিন্তু...
চুউউপ! যা বলছি বলবে, নাহলে না...গর্জে ওঠেন ব্রহ্মা! ভয় পেয়ে একেবারে সিঁটিয়ে গেল কেতকী।
ছুটে ছুটে বিষ্ণুর কাছে ফিরে এলেন ব্রহ্মা। তাঁর চোখের সামনে কেতকী কে ধরে বললেন, “হেঃ হেঃ,এই যে... দ্যাখো দ্যাখো,প্রমাণ দ্যাখো,আমি শেষ ছুঁয়ে ফিরে এসেছি... কেতকী তো সেখানেই থাকে... কি হে, বল?” বলে কেতকীর দিকে তাকান তিনি...

বেচারী কেতকী! কি আর করে...! হ্যাঁ...বলে যেই না মাথা নেড়েছে,অম্নি মহাদেব রেগে আগুন হয়ে মূর্তিমান হলেন... এমন মিথ্যাচার...! তাও আবার স্বয়ং মহাদেবের সামনে...!!
তত্ক্ষণাৎ শাপ দিলেন মহাদেব,
সব সুরভী মরবে কেঁদে আমার পরশ বিনে,
পুজোর ঘরের দুয়োর’টি তুই কক্ষনো ছুঁবি নে...
ব্যাস...! মহাদেবের কথা,এক কথা...! কেতকী অনেক কেঁদেছিল,কোন ফল হয় নি... সেই লঘুপাপের গুরুদন্ড মাথায় নিয়ে কেতকী আজও পুজোর ঘরের দুয়োর ছোঁয় না...।
এইরকমের একটা গপ্পো পারিজাতেরও আছে...
পারিজাত... মানে আদর করে যাকে শিউলি নামে ডাক দাও,সেই ফুল... সে নাহয় আরেকদিন শোনাবো...

পুষ্কর

By : Sayantari Ghosh


ব্রহ্মাঠাকুরের নাম তো তোমরা সবাই জানো...!! বিশ্বসংসারের স্রষ্টা বলে, ত্রিদেবের প্রথমজন বলে তাঁর ভয়ানক নামডাক...! সাদা পদ্মফুলের ওপরে বসে থাকেন, সাদা রাজহংসে করে যাতায়াত করেন,আর সবচে'বড় কথা সরস্বতী মা ঠাকরুনের মতন অমন বিদূষী যার সঙ্গে,তাঁর নামডাক হবে নাই বা কেন?
কিন্তু একটা গোলমেলে প্রশ্ন আছে আমার...
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই নিয়ে তো ত্রিদেব! শিবঠাকুরের মন্দির তো তোমার পাড়াতেই আছে... মাঝের জনের মন্দিরও দেখেছো হয়তঃ অনেক...
কিন্তু... ব্রহ্মাঠাকুরের মন্দির???  দেখেছো...?
কেন নেই...? ভেবেছো...?
সেই নিয়ে আসলে একটা মজার গপ্পো আছে... বলি শোনো...

সে অনেককাল আগের কথা। বজ্রনাভ বলে এক সাঙ্ঘাতিক রাক্ষসের ক্ষমতা তখন তুঙ্গে! তার জ্বালায় দেবতাদের দুঃখের অন্ত নেই...
সব্বাই মিলে ছুটে গেল ত্রিদেবের কাছে। প্রথমে ব্রহ্মা...
তা এম্নিতে ব্রহ্মাঠাকুর শান্ত মাথারই মানুষ... কিন্তু,দেবতাদের দুঃখু শুনে ভয়ানক রেগেটেগে গিয়ে তিনি হাতের নীল পদ্ম ছুঁড়ে দিলেন মর্ত্যের দিকে! আগুনের মত সেইফুল এসে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিল বাজে রাক্ষসটাকে!

দেবতারা তো মহাখুশি! কিন্তু যুদ্ধু করতে গিয়ে নীলপদ্মের তিনটে পাপড়ি টুপ টুপ করে খসে পড়ে গেল মাটিতে;একটা বড়,একটা মাঝারি আর একটা এএইটুকুনি...
যেখানে পড়লো সেখানে ঠিক সেই মাপের তিনখানি দীঘি হল; এক্কেরে গায়েগায়ে,পাশাপাশি...
দীঘি দেখতে ব্রহ্মা আর সব দেবতারা নেমে এলেন মর্ত্যে। কি সুন্দর দীঘি! কি টলটলে জল...! ব্রহ্মদেবের 'কর' থেকে 'পুষ্প' পতনে তৈরী দীঘি তিনটের নাম হল 'পুষ্কর'...
সব্বাই বললে, এইখেনে ব্রহ্মাঠাকুরের একখান মন্দির হোক। ব্রহ্মা রাজি হলেন মনে মনে এত্ত খুশি হয়ে।
তা মন্দির তো এমনি এমনি হবে না! যজ্ঞ করতে হবে...!! যাতে রাক্ষসেরা আর হাঙ্গামা না করতে পারে, তাই দীঘিদের ঘিরে পাহাড় তৈরী হল...
দক্ষিণে রত্নগিরি,উত্তরে নীলগিরি,পশ্চিমে সনচূড়া,পূর্বে সূর্যগিরি...

বেশ...! প্রস্তুতি শেষ... ডাক পড়লো সরস্বতীর... এরকমই তো নিয়ম! যজ্ঞ করতে গেলে ব্রহ্মা-সরস্বতীকে একসাথে বসে করতে হবে। খোঁজ... খোঁজ... খোঁজ...
সরস্বতীর পাত্তা নেই! কি করে থাকবে...? তিনি তো ওদিকে অপেক্ষা করে আছেন কখন লক্ষী, পার্বতী আর ইন্দ্রানী সেজেগুজে তৈরী হবেন...!!

এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে... পুরোহিতরা বললেন, "ভালো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু..."
ব্যাস্‌...! ব্রহ্মা গেলেন ক্ষেপে... রেগেমেগে বললেন, "অন্য মেয়ে দ্যাখো... আমি তাকে বিয়ে করে মন্দিরের কাজ সারবো... চাই না সরস্বতীকে..."
গাঁয়ের এক গয়লানির মেয়ে তখন যাচ্ছিল সেই পথে। ইন্দ্র আর বিষ্ণু তাকেই ধরে আনলেন... নতুন করে দেবীরূপে গড়ে দিলেন তাকে... তার নাম হল গায়ত্রী...

বিয়ে হল। তারপর যজ্ঞে বসা... দিব্বি চলছে সব... যজ্ঞ যখন মাঝপথে তখন সদলবলে সরস্বতী এসে হাজির।
ব্রহ্মার পাশে গায়ত্রী'কে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে গেল...!!

তক্ষণি অভিশাপ বেরিয়ে এল তাঁর মুখ থেকে,
"ব্রহ্মদেব...!! জগতের স্রষ্টা তুমি... আর এতটুকু ধৈর্য্য নেই তোমার...?? এত্ত সখ বুঝি মন্দিরের...?
অভিশাপ দিলাম,
এই এক পুষ্করই সার...
এ জগতে কখনওই আর
মন্দির হবে না তোমার...!!

ইন্দ্র, দেবতাদের রাজা তুমি... আর এত বড় অনাচারে প্রশ্রয় দিলে,
অভিশাপ দিলাম,
কক্ষনও জয় আসবে না কো যুদ্ধ হতে...
লক্ষ'টা যুগ লাগবে তোমার শুদ্ধ হতে...!!!

হে বিষ্ণুদেব,তোমাকে জগতের লোক পালনকর্তা বলে ডাকে...? তুমি নাকি সব্বারির ভালো চাও...? সব্বাইকে ভালো বাসো?
অভিশাপ দিলাম,
হারিয়ে যাবে স্বস্তি তোমার
সারা জীবন একলা রবে...
মানুষ হলে আপনজনার
বিরহদুখ তোমার হবে...!!!

আর এই যে পুরোহিতের দল... তোরা বুঝি আশির্বাদের আশায় সঙ্গ দিয়েছিলি এইসব দেবতাদের...?
তোদেরও শাস্তি হবে..!
অভিশাপ দিলাম,
লাখ আয়োজন! তোদের সেসব রুচবে না...
জন্মে তোদের দারিদ্রতা ঘুচবে না...!!"

এইসব বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলেন সরস্বতী...
হায় হায়...!! এ কি হল...!!
সক্কলের মুখে কালো ছায়া নেমে এল...ভয়ে প্রাণপাখি উড়ে যায় আর কি...!!

তখন গায়ত্রী সমাধান দিলেন... যজ্ঞের বলে তিনিও তখন পুরোদস্তুর দেবী...
তিনি বললেন,
"মুখ তোলো! মুখ তোলো! দেবী ও দেবেরা...
পুষ্কর হবে সব তীর্থের সেরা...!
স্বর্গ-সিংহাসন ইন্দ্র আপনার
থেকে যাবে... যুদ্ধেতে হোক যত হার।
সতীসীতা সাথে করে মানবজনম
বিষ্ণু নেবেন... নাম পুরুষোত্তম।
ধনলক্ষী করে থাক যত মুখ ভার...
পুরোহিতদল হবে জ্ঞানভান্ডার।"

তা এই হল গিয়ে গল্পটা...
গায়ত্রীর সবকটা কথা কিন্তু ভালোমতই ফলে গেছে...
খালি ব্রহ্মার মন্দিরের ইচ্ছে ওই পুষ্করে শুরু আর পুষ্করেই শেষ হয়ে গেল।

রাজস্থানেই তো পুষ্কর। চাইলে গিয়ে দেখো... সারা দুনিয়ায় ব্রহ্মার ওই একটি মাত্তর মন্দির...
তবে জায়গাটি খাসা... গিয়েছিলুম তো এই কবে... এখনও দীঘির জল ওরকমই টলটল করে... সূর্যাস্তে মিশে যায় সেদিনের যজ্ঞের রঙ আর পাহাড়গুলোর গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফেরে সরস্বতীর অভিশাপগুলো...

নীলচে সবুজ রহস্য

By : Sayantari Ghosh



বারোই জুলাই, ২০১২ নীল-রঙা নেপচুন এক বছরের হল। অবিশ্যি আমরা তাকে চেনার পর থেকে হিসেব করা হলে... এমনি করে আমরা মানুষের বয়েস হিসেব করি না যদিও, তবে গ্রহ নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। আর সত্যি বলতে কি এছাড়া আর উপায়ও নেই! তাদের বয়েসের মাপকাঠি আমাদের থেকে অনেএএক বড়সড় কিনা? এই নেপচুনের কথাই ধর,পৃথিবী’তে প্রায় এক’শ পঁয়ষট্টি বছর পার হলে নেপচুনের বয়েস বাড়ে মাত্র এক বছর! ঠিকমত দিন হিসেব করলে তারিখ’টা দাঁড়ায় তেইশে সেপ্টেম্বর,১৮৪৬,যেদিন আমাদের কাছে নেপচুন জন্মালো। আর বললে বিশ্বাস করবে কি না জানি না,এক ঘন্টাও লাগেনি সেদিন নেপচুন’কে খুঁজে বার করতে! অথচ তার পঁয়ষট্টি বছর আগে, ১৭৮১ থেকে গোল বেঁধেছে, নেপচুন লুকোচুরি খেলছে সেই তবে থেকে, কিন্তু আশ্চর্য! কেউ খুঁজেই পায় নি! আসলে একেই বলে কলমের খোঁচা! আবার অঙ্কের ভেল্কিও বলতে পারো! (যারা অঙ্ক’কে দু’চক্ষে দেখতে পারো না,এই বলে দিচ্ছি,শুনে নাও... অঙ্ক না থাকলে একটা আস্ত গ্রহ থেকেও না-থাকা হয়ে থাকতো চিরকাল... হু হু,বাবা,নিন্দে-মন্দ করলেই হবে?)।

নাহ, বড্ড ছড়িয়ে যাচ্ছে! বরং পেতে বলি গল্প’টা...
১৭৮১ সালে এক বসন্তের সন্ধ্যেয় নিজের টেলিস্কোপ বাগিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে উইলিয়ম হারশেল যবে থেকে ইউরেনাস’কে দেখেছেন, তার কিছুদিন পর থেকেই গল্পের শুরু। সৌরজগতের সপ্তম গ্রহটি আবিষ্কৃত হতেই দ্যাখা গেল আরো কিছু রহস্য যেন তার সাথেই দানা বেঁধে আছে। ইউরেনাসের যে পথে সূর্যের চারপাশে ঘোরার কথা, যত সময় লাগার কথা তার কোন অঙ্ক’ই সে পুরোপুরি মানে না! কোথাও ছোটে তাড়াতাড়ি, কোথাও বা ভীষণ ধীরে ধীরে। যেন কেউ তাকে ঠেলছে কখনও, কখনও বা টানছে পিছনদিকে... কে সে? অদেখা শক্তির উত্স খুঁজে চিরুনীতল্লাসী চলল, কিন্তু ওভাবে কি খোঁজ মেলে? অগনতি নক্ষত্রের আলো ঝিকিয়ে উঠলেই সব হিসেব গুলিয়ে যায় বারবার!

১৮২১ সালে একটা মস্ত বড় অঙ্ক কষা হল;কাগজে হিসেব করে লিখে ফ্যালা হল আগামী বছরগুলোতে কখন কোথায় থাকা ‘উচিত’ ইউরেনাসের। শুরু হল মিলিয়ে দ্যাখা, খুঁটিয়ে দেখতে চোখ পেতে বসে রইলেন বিজ্ঞানীরা; দ্যাখা গেল,হিসেবে কোনো ভুল নেই,কিন্তু ইউরেনাস মোটেই উচিত অনুচিতের হিসেবের ধার ধারছে না।

আবিষ্কারের গল্প হবে,আর সেই গল্পের একজন বুদ্ধিমান অঙ্ক-কষতে-ভালোবাসা নায়ক থাকবে না, তা কি হয়?
সে ছেলের নাম জন আডামস। ইংলন্ডের কর্ণোয়ালের কাছে একটা খুব ছোট গ্রাম লানেইস্টের এক চাষীর ছেলে সে। জমি আছে বাবার সামান্য, তাতে চাষ-বাস হয় অল্প করে, বাপ মা সাত ভাইবোনের সংসার তাতে টেনেটুনে চলে যায় একরকম। জন বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করত বটে, কিন্তু পাহাড়ের গায়ে ক্ষেতের পাশে বসে খাতা ভরিয়ে অঙ্ক করতেই যেন বেশী ভালো লাগে তার। যেদিন মেঘ থাকে না, সেদিন রাতের আকাশে তারার মেলায় হারিয়ে যেতে যেতে বিভোর হয়ে ভাবে লন্ডন... অক্সফোর্ড... কেমব্রিজ...
একদিন হঠাৎ করে সত্যি হয়ে গেল স্বপ্ন’টা। কোথা থেকে কে জানে টাকাকড়ি জোগাড় করে মা তার কেমব্রিজে আসার ব্যবস্থা করে দিলেন! ১৮৩৯ এ কেমব্রিজে এসেই একটা নতুন দরজা যেন খুলে গেল জনের সামনে। আর তখুনি কানাঘুষোয় একটা না-মেলা অঙ্কের খবর এসে পৌঁছালো তার কানে... ইউরেনাসের কক্ষপথে কে জানে কি গোলমাল... সে নাকি কোনো নিয়মের কথা শোনে না!

কলেজের পড়া শেষ করতে না করতেই কাজটায় হাত দিলেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে ইউরেনাসের চলার মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে তার খুব কাছেই থাকা আরেকজন কেউ। অঙ্কের কক্ষপথ থেকে ইউরেনাসের যেটুকু সরে যাওয়া,সে সেই অদৃশ্য উপস্থিতির জন্যেই। শুধু সেটুকু খবর আর নিউটনের সূত্রগুলি ছাড়া আর কিছুই লাগবে না সমস্যাটাকে মিটিয়ে ফেলতে। অঙ্ক কষে পরিষ্কার বলে দেওয়া যাবে,যে যার জন্যে এত গোলমাল,সে কে? সে কি কোন নক্ষত্র? না কি সৌরজগতের আরেক সদস্য? ধূমকেতু না কি নতুন কোন গ্রহ? কোথায় তার অবস্থান? এ’ধরনের অঙ্কের একটা নাম দেওয়া হয়েছে এখন... ইনভার্স প্রবলেম,মানে যাকে বলে ‘কার্য দেখিয়া কারণ অনুসন্ধান’!

১৮৪৪ এর সেপ্টেমরের মাঝামাঝি ‘সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ’টির খবর নিয়ে কেমব্রিজ অবসারভেটরির ডিরেক্টর জেমস চ্যালিসের কাছে জন আডামসের চিঠি পৌঁছায়। সমস্ত অঙ্কের খাতা তো আর পাঠানো যায় নি চিঠির সঙ্গে; তাই চ্যালিসের মনে হয় এ নেহাত্‌’ই ছেলেমানুষের মাতামাতি! বাকি অঙ্ক দেখতে না চেয়েই তিনি উত্তর লিখে দেন,“খাটনি প্রচুর হবে নিশ্চিত,আর সাফল্য নিশ্চিত নয় একেবারেই...”
বছরখানেক পেরিয়ে যাওয়ার পর আবার সুযোগ আসে। কর্ণওয়াল থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরার পথে একদিন গ্রিনিচ অবসারভেটরির প্রধান জর্জ এয়ারির বাড়িতে উপস্থিত হন আডামস। আপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছিল না;জর্জ বাড়িতেও ছিলেন না। বাধ্য হয়ে পুরোনো চিঠিটির’ই একটা কপি জর্জের টেবিলে রেখে যান আডামস। সে চিঠির উত্তরে সমস্ত অঙ্কের হিসেব মিলিয়ে দেখার জন্যে চেয়ে পাঠান জর্জ এয়ারি।

ইতিমধ্যে সুদূর ফ্রান্সে একই সমস্যা নিয়ে মাথা খাটাচ্ছিলেন আরেকজন গণিতবিদ। তাঁর নাম লা ভেরিয়র। ১৮৪৫ এর নভেম্বরে আর পরের বছর জুনে পরপরদুটি পত্রিকায় তাঁর গণনা প্রকাশিত হয় আর সে গণনা অনুসরণ করে প্রথম ২৩শে সেপ্টেম্বর রাতে নেপচুন’কে দ্যাখা যায় বার্লিন থেকে। যেখানে থাকার কথা লা ভেরিয়র বলেছিলেন তার এক ডিগ্রির ভেতরেই!! অবসারভেটরির একজন উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন,“খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার কাজটিকে পড়া-পড়া-খেলার মত সোজা করে দেয়,গণিত এমনি সুন্দর!”

২৩শে সেপ্টেম্বর ১৮৪৬। নাইট্রোজেন আর মিথেনের বরফে মোড়া সৌরজগতের দ্বিতীয় নীলগ্রহ’টি প্রথম ধরা পড়ে টেলিস্কোপের লেন্সে।
কিন্তু এই দীর্ঘ এক বছর সময় জন আডামস কেন এয়ারির চিঠির উত্তর পাঠাননি তা এখনও রহস্য। যে গণনা তিনি কতদিন আগে মিলিয়ে ফেলেছেন,দোরে দোরে ফিরেছেন তার স্বীকৃতির খোঁজে,কেন তা পাঠালেন না এয়ারি’কে? এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি। হয়তঃ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন,হয়তঃ বা নিজেই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন...

ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মধ্যে “নেপচুন কার” এ জাতীয় একটা ঠান্ডা লড়াই বেঁধেছিল সে সময়। শেষ অবদি ভেরিয়র’ই নেপচুনের আবিষ্কর্তা হিসাবে স্বীকৃত হয়ে যান। সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার অবস্থান টেলিস্কোপের আগে অঙ্কের খাতা জেনেছিল... ভেরিয়র’ই হলেন তার প্রথম দ্রষ্টা। আর জন আডামসের নাম একটা রহস্যের মত খালি জড়িয়ে রয়ে গেল নীলচে সবুজ নেপচুনের গায়ে।

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -