Popular Post

Archive for November 2015

মৌন দিয়ে ছোঁয়া / দুই

By : Sayantari Ghosh
অপব্যয়
এখনও কাগজ দিয়ে যায়নি...!
অন্যদিন হলে এক্ষুনি মেজাজটা খিঁচড়ে যেত দীপ্তাভ'র... কিন্তু আজ কিছু হল না... এম্নিই... অকারণে... আজ যেন কাগজ না দেখলেও চলে... দুনিয়ার খবরাখবর না জানলেও... অকারণে... অকারণে আজ ছুটি নেওয়া যায়...
এখুনি করা চা কাপে ঢেলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে এল ও... পাঁচতলার ওপর থেকে খুব বেপরোয়া লাগে নিচের রাস্তাটাকে... এটা চিরকালই লাগে ওর... এই ফ্ল্যাটে আসা থেকে... নিচের রাস্তাটা যেন সারাক্ষণ “আয় আয়” করে ডাকে... ঝাঁপিয়ে কোলে চলে আসতে বলে... আজও বলছে...আরও যেন বেশি করে বলছে... ভোরটা আজকে কেমন যেন অন্যরকম... ঝিম্‌ম্‌ ধরানো... ভোর বলে মনেই হয়না... যেন এখনও অনেএএক দেরি রাত্তিরের ঘুম ভাঙতে। ব্যালকনির বেতের চেয়ারে হিম-হিম ছোপ... কাল রাত্তিরে বৃষ্টি হয়েছে...? নাকি হবে... এখন......
চায়ের কাপের প্রথম চুমুকই জানান দিয়ে দিল, চিনি কম! ভালো... বয়স হচ্ছে না? চিনি কম খাওয়া ভালো... তনু কি ঘ্যানঘ্যান করতো এই নিয়ে...!! এলেই মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলতো, “মণি, তেল মশলা মিষ্টি সবেতে রেস্ট্রিক্‌শন করে দাও দীপের... আররে বয়েস হচ্ছেনা না কি?”
একটা হাসি টুপ করে ছুঁয়ে গেল সকালের রাশভারি মেঘ সরিয়ে...
তনু...
রীতিমত যুদ্ধ করেও কোনোদিন 'দাদা' হতে পারা যায়নি ওর... 'দীপ' হয়ে গেছে দীপ্তাভ... “ছয়মাসের বড়, তায় আবার ক্লাসমেট... দাদা কিসের রে?” বলতো তনু... বললেই রাগারাগি... হাত ধরে মোচড়... কলাবেণীতে টান..... ওদের থামাতে না পেরে দিদু সিধে গিয়ে নালিশ ঠুকতো মামিমার দপ্তরে, “আরে অ তনুর মা... তর মাইয়ার একগাসি সুল রইবো না আর... কথা সনে না মুখপুড়ি...! বলি কি করে কি অ দুইটায় মিইল্যা সারাখন?!”
তনু...
একটা ছিমছাম একতারার সুরের মত... খালি ভালোবাসতে জানত... তার মানে আসলে তনু সঅঅব জানত..!! খুব আনন্দে আদরে ভাসিয়ে দেওয়া যায় এমন বোন হতে জানত... মনখারাপে স্বপ্ন-স্বপ্ন আলো-আলো রূপকথা হতে জানত... গোপন খবরের জাদুআয়না, বেস্টফ্রেন্ড হতে জানত... আর... আর অদ্ভূতভাবে, খুব অদ্ভূতভাবে দারুণ অন্ধকারে তনু একেবারে মায়ের মতন হয়ে যেতে জানত...
তনু খালি ভালোবাসতে জানত...
হাসির গায়ে জড়িয়ে জড়িয়ে স্বর্ণলতার মত দীর্ঘশ্বাস বাড়তে লাগল...
এককণা ভরসা হতে পারেনি দীপ্তাভ... বিশ্ব ওভাবে চলে গেল... হঠাত্‌...
কি বলতে হয়...?? কি বলতে হত তনুকে...? ঠিক কি দিলে ভালো রাখা যেতো ওকে? সব সঅঅব গুলিয়ে গেছিল মূহুর্তে...
দেরি হয়ে গেছিল খুব ডাকতে... সে বেচারি চেয়ে চেয়ে থেকে শেষকালে চোখ নামিয়ে নিয়েছিল পথ থেকে...
“অপব্যয়...! তোর সময়ের অপব্যয়, দীপ...! আমি একেবারে ঠিক আছি রে...”
বুকের ঠিক মাঝখানে ঠং করে কাচ ভাঙলো একটা... কাচ না, আয়না ভাঙলো... কে জানে বাইরে শোনা গেল কি না... এখানে, ওখানে, ওইখানে... ওই মেঘ-অব্দি শোনা গেল? মেঘের ওপাশে...? গেল শোনা? একটা কি যেন পাখি টেনে টেনে সুর করে কত কি অভিযোগ করতে লাগলো চোখের আড়ালে থেকে... তারপর হঠাত থেমে গেল... শব্দ নেই...... কোনো শব্দ নেই...... শব্দ বলে কিচ্ছু হয়না এ সকালে......
দীপও হতে পারেনি দীপ্তাভ...
..................................................................
মৌনতা অপরাধ...?
মৌনতা শাস্তি।
[ক্রমশঃ]

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -