Popular Post

Archive for May 2013

দ্য আনসিঙ্কেব্‌ল্‌ / এক

By : Sayantari Ghosh

আজকে একটা অন্যরকম গপ্পো শোনাই তবে...

বিলিতি গপ্পো... তবে গল্প হলেও খাঁটি সত্যি... হাতেনাতে প্রমাণ আছে...
গল্প মানে আসলে এক সাহেবের কথা। আর একটা জাহাজের... খোলসা করেই বলি বরং...

সাহেবের নাম মরগ্যান রবার্টসন। আমেরিকার মানুষ।
সমুদ্র ভালোবাসতেন তখন থেকে যখন তাঁর বয়স আট কি দশ...! ক্যাবিনবয়ের চাকরি নিয়ে কোন ছোট্টবেলায় জাহাজে উঠে পরা আর দীর্ঘদিন ধরে ভেসে চলা...এই নিয়েই কাটিয়েছিলেন প্রায় সারাটা জীবন... দেখতে দেখতে ক্যাবিনবয় জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে গেল অভিজ্ঞতার জোরে...শেষকালে, ১৮৭৭ সালে, সমুদ্র আলতো হাতে ক্লান্তি এঁকে দিল তাঁর চোখে... কূল টানলো... ফিরে এলেন দেশে...

পাঁচমেশালি কাজে আরো কিছুদিন কাটলো... কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই দেখতেন মন জুড়ে আছে সমুদ্র, শ্বাসজুড়ে নোনা হাওয়া আর বুক ভর্তি হাজার একটা গল্প ওই নীল জলের রহস্য ছোঁয়ানো...

মরগ্যান সাহেব কলম ধরলেন। সাল'টা ১৮৯৮। গল্প লিখলেন... বেশ বড় গল্প...
একটা জাহাজের গল্প... নাম 'টাইটান'; সে তো জাহাজ নয়, ভাসমান শহর যেন...! লোকে বলত অত বড় জাহাজ ডুবতে পারে না...৮০০ ফুট লম্বা, পঁচাত্তর হাজার টন তার ওজন... সে সময়কার প্রযুক্তিবিদ্যার বিস্ময়কন্যা...!
সমুদ্রে ভাসল টাইটান... রুমাল উড়িয়ে বিদায় জানাল ৩০০০ যাত্রীর আত্মীয়-পরিজন...যাত্রীরাও যে সে লোক নয়...! রাজসিক ওই জাহাজে যাওয়ার খরচ-খরচা কম নাকি...? জাহাজে যারা ছিলেন সবাই ইউরোপ আর আমেরিকার অতি উচ্চবিত্ত...!

তখন এপ্রিল মাস। রাতের অন্ধকার বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে তখন। আনন্দে উল্লাসে, হাসির লহরায় আতলান্তিকের জল আর আকাশ ধুইয়ে তরতর করে ছুটে চলেছে টাইটান... ক্যাপ্টেন দেখেনিলেন, আকাশে আলতো কুয়াশা, জাহাজের গতিবেগ ২৫ নট/ঘন্টা। যাত্রীরা অত হুঁশে নেই অবশ্য তখন... অনেকেই নেশায় একটু বেসামাল...
জায়গাটা টেরানোভার থেকে চারশো মাইল মত দূরে...
হঠাত্‌ খুব জোরে কেঁপে উঠল গোটা জাহাজ... আর সঙ্গে একটা প্রচন্ড শব্দ... অনেকেই ছুটে বেরিয়ে এলেন জাহাজের ডেকে...
একটা শব্দ মুখে মুখে প্রতিধ্বনির মত ঘুরে ঘুরে বেড়াল কিছুক্ষণ... আইসবার্গ...!!
তারপর কিছু টুকরো আর্তনাদ, বেপরোয়া চেষ্টা, আর যুদ্ধ... বাঁচার...!!!

টাইটান কূলে ভেড়েনি আর কখনও... ৩০০০ যাত্রীর জাহাজে লাইফবোট ছিল মাত্র ২৪টা... তাও বিপর্যয়ের সময় কাজে লাগানো যায় নি সেভাবে...
১৩জন বেঁচেছিল...
সমুদ্র গিলে খেয়েছিল বাকি সমস্তক'টা প্রাণ আর 'দ্য আনসিঙ্কেব্‌ল্‌' টাইটানকে...!!

................................................

মরগ্যান সাহেব লেখাটির নাম দেন 'দ্য রেক অফ দ্য টাইটান'...

পড়া হল তো...?গল্পটা কি কোনোভাবে চেনা চেনা লাগে...? নাম... জায়গা... পরিস্থিতি... সংখ্যা... সব...?

হ্যাঁ... আমাদের চেনা লাগা'টা স্বাভাবিক... 'টাইটানিক' আমাদের কাছে ইতিহাসের মত... বহুপঠিত...
আর সিনেমাটি তো চোখে এঁকে দিয়ে গেছে টাইটানিকের আটলান্টিকে তলিয়ে যাবার দৃশ্য...!

তাই এ গল্প'টা আমরা জানি... ঘটা করে এ গল্প লিখে ছাপাতে গেলে কোন প্রকাশকই রাজী হবেন না...

মরগ্যান সাহেবের গল্পটিও সেভাবে কেউ ছাপেনি...!
তবে কারণ'টা অন্য ছিল।
প্রকাশক'রা বলেছিলেন, এ'সব সমুদ্রনাবিকের কষ্টকল্পনা...! ও রকম জাহাজ তৈরী হতেই পারেনা; আর তৈরী হলেও ডুবে যেতে...?? কিছুতে কিছুতে পারেনা...!!

.................................................

মরগ্যান রবার্টসন এ গল্প লিখেছিলেন ১৮৯৮-এ...
১৯১২র চোদ্দ'ই এপ্রিল টাইটানিক আতলান্টিকে তলিয়ে যাবার চোদ্দ বছর আগে...!

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -