Popular Post

Posted by : Sayantari Ghosh Sunday, September 16, 2012



ব্রহ্মাঠাকুরের নাম তো তোমরা সবাই জানো...!! বিশ্বসংসারের স্রষ্টা বলে, ত্রিদেবের প্রথমজন বলে তাঁর ভয়ানক নামডাক...! সাদা পদ্মফুলের ওপরে বসে থাকেন, সাদা রাজহংসে করে যাতায়াত করেন,আর সবচে'বড় কথা সরস্বতী মা ঠাকরুনের মতন অমন বিদূষী যার সঙ্গে,তাঁর নামডাক হবে নাই বা কেন?
কিন্তু একটা গোলমেলে প্রশ্ন আছে আমার...
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই নিয়ে তো ত্রিদেব! শিবঠাকুরের মন্দির তো তোমার পাড়াতেই আছে... মাঝের জনের মন্দিরও দেখেছো হয়তঃ অনেক...
কিন্তু... ব্রহ্মাঠাকুরের মন্দির???  দেখেছো...?
কেন নেই...? ভেবেছো...?
সেই নিয়ে আসলে একটা মজার গপ্পো আছে... বলি শোনো...

সে অনেককাল আগের কথা। বজ্রনাভ বলে এক সাঙ্ঘাতিক রাক্ষসের ক্ষমতা তখন তুঙ্গে! তার জ্বালায় দেবতাদের দুঃখের অন্ত নেই...
সব্বাই মিলে ছুটে গেল ত্রিদেবের কাছে। প্রথমে ব্রহ্মা...
তা এম্নিতে ব্রহ্মাঠাকুর শান্ত মাথারই মানুষ... কিন্তু,দেবতাদের দুঃখু শুনে ভয়ানক রেগেটেগে গিয়ে তিনি হাতের নীল পদ্ম ছুঁড়ে দিলেন মর্ত্যের দিকে! আগুনের মত সেইফুল এসে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিল বাজে রাক্ষসটাকে!

দেবতারা তো মহাখুশি! কিন্তু যুদ্ধু করতে গিয়ে নীলপদ্মের তিনটে পাপড়ি টুপ টুপ করে খসে পড়ে গেল মাটিতে;একটা বড়,একটা মাঝারি আর একটা এএইটুকুনি...
যেখানে পড়লো সেখানে ঠিক সেই মাপের তিনখানি দীঘি হল; এক্কেরে গায়েগায়ে,পাশাপাশি...
দীঘি দেখতে ব্রহ্মা আর সব দেবতারা নেমে এলেন মর্ত্যে। কি সুন্দর দীঘি! কি টলটলে জল...! ব্রহ্মদেবের 'কর' থেকে 'পুষ্প' পতনে তৈরী দীঘি তিনটের নাম হল 'পুষ্কর'...
সব্বাই বললে, এইখেনে ব্রহ্মাঠাকুরের একখান মন্দির হোক। ব্রহ্মা রাজি হলেন মনে মনে এত্ত খুশি হয়ে।
তা মন্দির তো এমনি এমনি হবে না! যজ্ঞ করতে হবে...!! যাতে রাক্ষসেরা আর হাঙ্গামা না করতে পারে, তাই দীঘিদের ঘিরে পাহাড় তৈরী হল...
দক্ষিণে রত্নগিরি,উত্তরে নীলগিরি,পশ্চিমে সনচূড়া,পূর্বে সূর্যগিরি...

বেশ...! প্রস্তুতি শেষ... ডাক পড়লো সরস্বতীর... এরকমই তো নিয়ম! যজ্ঞ করতে গেলে ব্রহ্মা-সরস্বতীকে একসাথে বসে করতে হবে। খোঁজ... খোঁজ... খোঁজ...
সরস্বতীর পাত্তা নেই! কি করে থাকবে...? তিনি তো ওদিকে অপেক্ষা করে আছেন কখন লক্ষী, পার্বতী আর ইন্দ্রানী সেজেগুজে তৈরী হবেন...!!

এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে... পুরোহিতরা বললেন, "ভালো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু..."
ব্যাস্‌...! ব্রহ্মা গেলেন ক্ষেপে... রেগেমেগে বললেন, "অন্য মেয়ে দ্যাখো... আমি তাকে বিয়ে করে মন্দিরের কাজ সারবো... চাই না সরস্বতীকে..."
গাঁয়ের এক গয়লানির মেয়ে তখন যাচ্ছিল সেই পথে। ইন্দ্র আর বিষ্ণু তাকেই ধরে আনলেন... নতুন করে দেবীরূপে গড়ে দিলেন তাকে... তার নাম হল গায়ত্রী...

বিয়ে হল। তারপর যজ্ঞে বসা... দিব্বি চলছে সব... যজ্ঞ যখন মাঝপথে তখন সদলবলে সরস্বতী এসে হাজির।
ব্রহ্মার পাশে গায়ত্রী'কে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে গেল...!!

তক্ষণি অভিশাপ বেরিয়ে এল তাঁর মুখ থেকে,
"ব্রহ্মদেব...!! জগতের স্রষ্টা তুমি... আর এতটুকু ধৈর্য্য নেই তোমার...?? এত্ত সখ বুঝি মন্দিরের...?
অভিশাপ দিলাম,
এই এক পুষ্করই সার...
এ জগতে কখনওই আর
মন্দির হবে না তোমার...!!

ইন্দ্র, দেবতাদের রাজা তুমি... আর এত বড় অনাচারে প্রশ্রয় দিলে,
অভিশাপ দিলাম,
কক্ষনও জয় আসবে না কো যুদ্ধ হতে...
লক্ষ'টা যুগ লাগবে তোমার শুদ্ধ হতে...!!!

হে বিষ্ণুদেব,তোমাকে জগতের লোক পালনকর্তা বলে ডাকে...? তুমি নাকি সব্বারির ভালো চাও...? সব্বাইকে ভালো বাসো?
অভিশাপ দিলাম,
হারিয়ে যাবে স্বস্তি তোমার
সারা জীবন একলা রবে...
মানুষ হলে আপনজনার
বিরহদুখ তোমার হবে...!!!

আর এই যে পুরোহিতের দল... তোরা বুঝি আশির্বাদের আশায় সঙ্গ দিয়েছিলি এইসব দেবতাদের...?
তোদেরও শাস্তি হবে..!
অভিশাপ দিলাম,
লাখ আয়োজন! তোদের সেসব রুচবে না...
জন্মে তোদের দারিদ্রতা ঘুচবে না...!!"

এইসব বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলেন সরস্বতী...
হায় হায়...!! এ কি হল...!!
সক্কলের মুখে কালো ছায়া নেমে এল...ভয়ে প্রাণপাখি উড়ে যায় আর কি...!!

তখন গায়ত্রী সমাধান দিলেন... যজ্ঞের বলে তিনিও তখন পুরোদস্তুর দেবী...
তিনি বললেন,
"মুখ তোলো! মুখ তোলো! দেবী ও দেবেরা...
পুষ্কর হবে সব তীর্থের সেরা...!
স্বর্গ-সিংহাসন ইন্দ্র আপনার
থেকে যাবে... যুদ্ধেতে হোক যত হার।
সতীসীতা সাথে করে মানবজনম
বিষ্ণু নেবেন... নাম পুরুষোত্তম।
ধনলক্ষী করে থাক যত মুখ ভার...
পুরোহিতদল হবে জ্ঞানভান্ডার।"

তা এই হল গিয়ে গল্পটা...
গায়ত্রীর সবকটা কথা কিন্তু ভালোমতই ফলে গেছে...
খালি ব্রহ্মার মন্দিরের ইচ্ছে ওই পুষ্করে শুরু আর পুষ্করেই শেষ হয়ে গেল।

রাজস্থানেই তো পুষ্কর। চাইলে গিয়ে দেখো... সারা দুনিয়ায় ব্রহ্মার ওই একটি মাত্তর মন্দির...
তবে জায়গাটি খাসা... গিয়েছিলুম তো এই কবে... এখনও দীঘির জল ওরকমই টলটল করে... সূর্যাস্তে মিশে যায় সেদিনের যজ্ঞের রঙ আর পাহাড়গুলোর গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফেরে সরস্বতীর অভিশাপগুলো...

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -