- Back to Home »
- একটু বড় গল্প »
- আবার যদি ইচ্ছে কর / তিন
Posted by : Sayantari Ghosh
Wednesday, April 13, 2016
তিন
“এই যে পোস্টম্যানের বউ, তুই কি খাবি লাঞ্চে?” খোঁচা মারলাম হেম’কে, “তোর’ও ওই মিক্সড চাউমিন’ই তো?”
“অঙ্কুর শাহ, হি হ্যাস আ নেম… ও.কে.?” আচমকা বলল হেম, মুখে আলতো হাসি! পারো লাফিয়ে উঠলো কথাটা শুনেই, “উফফফ… জিও! শিগগির লাঞ্চ অর্ডার’টা দিয়ে ছুট্টে আয় রিনি, সামওয়ান ওয়ান্টস টু শেয়ার সাম সিক্রেটস্ আট লাস্ট!!!”
“অঙ্কুর শাহ, হি হ্যাস আ নেম… ও.কে.?” আচমকা বলল হেম, মুখে আলতো হাসি! পারো লাফিয়ে উঠলো কথাটা শুনেই, “উফফফ… জিও! শিগগির লাঞ্চ অর্ডার’টা দিয়ে ছুট্টে আয় রিনি, সামওয়ান ওয়ান্টস টু শেয়ার সাম সিক্রেটস্ আট লাস্ট!!!”
এক্কেবারে চমকে গেছিলাম আমিও; চিরকাল জানতাম, হেম যে ছেলেটির সাথে চ্যাট করত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, আসাইনমেন্ট ডুব মেরে, তার নাম-ধাম-কাজকাম কিছুই সে জানেনা। আরও অবাক হতাম এটা দেখে যে ও জানতেও চায় না! ছেলেটির চ্যাট আই.ডি. ছিল ‘দ্য পোস্টম্যান’… ব্যাস! আর কোন পরিচয় ছিল না তার আমাদের কাছে।
কিন্তু কি নিয়ে না কথা হত ওদের? সকালের চায়ে চিনি কম থেকে বিকেলে লোহিতের ছাদ থেকে সূর্যাস্ত, পরীক্ষায় দ্যাখাদেখি করে লেখা থেকে ভি.সি. কে ঘেরাও করতে গিয়ে হেম আর রুদ্র’র সাসপেন্ড হওয়া… যাবতীয় গল্প হেম করতো তার সাথে। মনখারাপ, মনভালো, অভিমান, স্বপ্ন কিচ্ছু বাদ যেত না।বাদ যেত খালি স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়গুলো। সে ছেলেও নাকি বহু কিছু বলত খোলামনে আর হেমের কাছে এই ‘খোলামন’ শব্দ’টা বরাবর খুব গুরুত্ব রাখত; ও বলত, দুটো মানুষের ‘স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স’-এ থাকা চরিত্রগুলো যদি একটুও না মেলে, তাহলে সেই দুটি মানুষের বন্ধুত্বে কোন রাখঢাক থাকে না… আর সেই বিশ্বাস থেকে একটা অদ্ভূত ভরসা পাওয়া যায়… পরস্পরের প্রতিটি মতামত’কে গুরুত্ব না দিয়ে, না ভেবে বাতিল করা যায় না কিছুতেই।
ইউনিভার্সিটি’তে, ক্লাসে বা রাজনীতির সূত্রে অনেকের সাথে হেম’কে মিশতে দেখেছি; কিন্তু ‘পোস্টম্যান’ ছাড়া কাউকে নিয়ে ওকে এত’টা গভীরভাবে ভাবতে দেখিনি, সেটা সত্যি। ওর কথা শুনে মনে হত, যে ওর মত একটি মেয়ের উচ্ছ্বলতা বা স্পর্ধা’টাকে খোলাখুলি প্রশ্র্য় দিত ছেলেটি; সে সাহস সবার থাকেনা। কিন্তু ওদের এই আড়াল রাখা, পর্দানশীন ফিলোসফিকাল বন্ধুত্ব’টা একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কেন, তার কোন ব্যাখ্যা পেতাম না কিছুতেই। ফলে এতদিন পর পোস্টম্যানের অঙ্কুর শাহ পদে উত্তরণের খবর শুনে ঠিক কত’টা খুশি হলাম আর কতটা অবাক, নিজেই মেপে উঠতে পারলাম না ঠিকমত।
কিন্তু কি নিয়ে না কথা হত ওদের? সকালের চায়ে চিনি কম থেকে বিকেলে লোহিতের ছাদ থেকে সূর্যাস্ত, পরীক্ষায় দ্যাখাদেখি করে লেখা থেকে ভি.সি. কে ঘেরাও করতে গিয়ে হেম আর রুদ্র’র সাসপেন্ড হওয়া… যাবতীয় গল্প হেম করতো তার সাথে। মনখারাপ, মনভালো, অভিমান, স্বপ্ন কিচ্ছু বাদ যেত না।বাদ যেত খালি স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়গুলো। সে ছেলেও নাকি বহু কিছু বলত খোলামনে আর হেমের কাছে এই ‘খোলামন’ শব্দ’টা বরাবর খুব গুরুত্ব রাখত; ও বলত, দুটো মানুষের ‘স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স’-এ থাকা চরিত্রগুলো যদি একটুও না মেলে, তাহলে সেই দুটি মানুষের বন্ধুত্বে কোন রাখঢাক থাকে না… আর সেই বিশ্বাস থেকে একটা অদ্ভূত ভরসা পাওয়া যায়… পরস্পরের প্রতিটি মতামত’কে গুরুত্ব না দিয়ে, না ভেবে বাতিল করা যায় না কিছুতেই।
ইউনিভার্সিটি’তে, ক্লাসে বা রাজনীতির সূত্রে অনেকের সাথে হেম’কে মিশতে দেখেছি; কিন্তু ‘পোস্টম্যান’ ছাড়া কাউকে নিয়ে ওকে এত’টা গভীরভাবে ভাবতে দেখিনি, সেটা সত্যি। ওর কথা শুনে মনে হত, যে ওর মত একটি মেয়ের উচ্ছ্বলতা বা স্পর্ধা’টাকে খোলাখুলি প্রশ্র্য় দিত ছেলেটি; সে সাহস সবার থাকেনা। কিন্তু ওদের এই আড়াল রাখা, পর্দানশীন ফিলোসফিকাল বন্ধুত্ব’টা একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কেন, তার কোন ব্যাখ্যা পেতাম না কিছুতেই। ফলে এতদিন পর পোস্টম্যানের অঙ্কুর শাহ পদে উত্তরণের খবর শুনে ঠিক কত’টা খুশি হলাম আর কতটা অবাক, নিজেই মেপে উঠতে পারলাম না ঠিকমত।
ঝপ করে লাঞ্চ’টা অর্ডার করে এসে, বেশ জমিয়ে বসে পড়ে বললাম, “ফাটাফাটি একটা গল্প শোনা হবে মনে হচ্ছে!”
“শুরু কর, মিস ছুপা রূস্তম”, পারো বলল খুনসুটি করে।
এক গাল হেসে হেম শুরু করল, “গল্প’টা কিন্তু একেবারেই তেমন কিছু না…”
“আর ভূমিকা করতে হবে না, বলে ফ্যাল তাড়াতাড়ি” সমস্বরে বললাম আমরা।
“শুরু কর, মিস ছুপা রূস্তম”, পারো বলল খুনসুটি করে।
এক গাল হেসে হেম শুরু করল, “গল্প’টা কিন্তু একেবারেই তেমন কিছু না…”
“আর ভূমিকা করতে হবে না, বলে ফ্যাল তাড়াতাড়ি” সমস্বরে বললাম আমরা।
“ওহহো”, হাসতে হাসতে বলল হেম, “শোন, এখান থেকে বেরিয়ে যখন মুম্বাই গেলাম প্রথম চাকরি’টা নিয়ে এই নামধাম জানা’টা মোটামুটি সেই সময়ের কথা…”
“ঝুঠি, ঝুঠি”, পারো বলে উঠল মাঝপথে, “এত্তদিন ধরে মিথ্যে বলে যাচ্ছে…”
“আরে শেষ তো করতে দে”, বলল হেম, “তা… যখন জানলাম যে অঙ্কুরের বাড়িও মুম্বাইয়ে, তখন ভাবলাম ইট ইস আ নাইস কোইন্সিডেন্স। দ্যাখা করার দিন’টা ঠিকই করে ফেললাম অনেক ভেবেচিন্তে…”
“উফফফফ… কি রোম্যান্টিক…!” পারো টিপ্পনি কাটল।
“ঝুঠি, ঝুঠি”, পারো বলে উঠল মাঝপথে, “এত্তদিন ধরে মিথ্যে বলে যাচ্ছে…”
“আরে শেষ তো করতে দে”, বলল হেম, “তা… যখন জানলাম যে অঙ্কুরের বাড়িও মুম্বাইয়ে, তখন ভাবলাম ইট ইস আ নাইস কোইন্সিডেন্স। দ্যাখা করার দিন’টা ঠিকই করে ফেললাম অনেক ভেবেচিন্তে…”
“উফফফফ… কি রোম্যান্টিক…!” পারো টিপ্পনি কাটল।
একটুও পাত্তা না দিয়ে হেম বলে চলল, “একটা গোটা দিন একসাথে স্পেন্ড করার প্ল্যান করা হল। ফাইনালি দ্য ডে কেম আর যখন দশ’টা নাগাদ গেটওয়ে অব ইন্ডিয়াতে আই ফার্স্ট স হিম… আমার একদম ইনিশিয়াল রিয়াকশন কি ছিল বল ত?”
“কি?”
“কি??”
“……… যে হি ইস নট দ্য গাই…”
“হোয়াআ…?!”
“মানে??!!”
“কি?”
“কি??”
“……… যে হি ইস নট দ্য গাই…”
“হোয়াআ…?!”
“মানে??!!”
আমরা দুজনেই হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম হেমের দিকে!! বলে কি মেয়ে’টা? এতদিন এত কথা, এও গল্প… আর শেষকালে ‘দেখে’ মনে হল যে এ সে নয়…?! হেম অন্ততঃ ঠিক এরকম না… হেম’কে যা চিনি…
“মানে আমায় মিস আন্ডারস্ট্যান্ড করিস না প্লিস…” আমাদের অবস্থাটা বুঝে সামাল দিতে চাইল হেম, “মানে দ্যাখ আমি বোঝাবার চেষ্টা করছি… আমি ওর আপিয়ারেন্সের কথা এক্কেবারে বলছি না… ওর আপ্রোচ… খুব খুব অন্যরকম… মানে আমি এরকম ভাবিনি… সারা’টা দিন কাটালাম আর বারবার আমার এটাই মনে হল যে হয়তঃ আমার সাথে মিশতে গিয়ে আমার যে অংশ’টাকে ও মেনে নিয়েছে, সেটাকে ও নিজের মলাট হিসেবে সাজিয়ে নিয়েছে… আমায় ও পছন্দ করত বলে সেটাকে গায়ে তুলতে ওর সমস্যা হয়নি… ওকে দোষ দিচ্ছিনা আমি; কিন্তু গোলমাল হল যে আমি তো ভুল বুঝেছি পুরোপুরি… আমি তো সেই মলাট’টাকেই পুরো বই’টা ভেবে ফেলেছি… মানে… বুঝতে পারছিস আমি কি বলছি?” সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে হেম বলল; কেমন যেন অসহায় দ্যাখাচ্ছিল ওকে… আর ভীষণ ডেস্পারেট!
“মানে আমায় মিস আন্ডারস্ট্যান্ড করিস না প্লিস…” আমাদের অবস্থাটা বুঝে সামাল দিতে চাইল হেম, “মানে দ্যাখ আমি বোঝাবার চেষ্টা করছি… আমি ওর আপিয়ারেন্সের কথা এক্কেবারে বলছি না… ওর আপ্রোচ… খুব খুব অন্যরকম… মানে আমি এরকম ভাবিনি… সারা’টা দিন কাটালাম আর বারবার আমার এটাই মনে হল যে হয়তঃ আমার সাথে মিশতে গিয়ে আমার যে অংশ’টাকে ও মেনে নিয়েছে, সেটাকে ও নিজের মলাট হিসেবে সাজিয়ে নিয়েছে… আমায় ও পছন্দ করত বলে সেটাকে গায়ে তুলতে ওর সমস্যা হয়নি… ওকে দোষ দিচ্ছিনা আমি; কিন্তু গোলমাল হল যে আমি তো ভুল বুঝেছি পুরোপুরি… আমি তো সেই মলাট’টাকেই পুরো বই’টা ভেবে ফেলেছি… মানে… বুঝতে পারছিস আমি কি বলছি?” সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে হেম বলল; কেমন যেন অসহায় দ্যাখাচ্ছিল ওকে… আর ভীষণ ডেস্পারেট!
“হু, হু, বুঝতে পারছি তো…” খুব পরিষ্কার বুঝলেও সায় দিলাম আমি, “নিজেকে চাপে ফেলিস না হেম, ভালো লাগেনি নিশ্চয়ই কিছু… কি হয়েছে তাতে? হতেই তো পারে…”
পারো’ও মাথা নাড়িয়ে বলল, “বুঝতে পারছি আমরা…”
পারো’ও মাথা নাড়িয়ে বলল, “বুঝতে পারছি আমরা…”
“থ্যাঙ্কস”, একটু যেন ঠান্ডা হল হেম, “মানে খুউউব ছোট ছোট ব্যাপার থেকে অনেক বড় বড় ব্যাপার অব্দি… ধর, এই যে আমার ফিল্ম ক্রিটিকের ট্রেনির চাকরিটা, এটা যে এম্নিই, আমি যে এরপর সিরিয়াসলি লেখালিখি’টা করতে চাই… মানুষের কথা লিখতে চাই, সারা দেশ বেড়াতে চাই, মানুষের সাথে মিশতে চাই… বা ধর আমাদের ইউনিভার্সিটির মশাল র্যা লি বা হাঙ্গার স্ট্রাইক, তার দাবীগুলো, যা ন্যায্য, যা প্রাপ্য, তার কথা জোর গলায় বলা, যেমন আমি বলতাম, রুদ্র বলত… অঙ্কুর এ’সব খুব মন দিয়ে শোনে, কিন্তু সেগুলো ভুলতে ওর কয়েক’টা সেকেন্ড লাগে মাত্র… চ্যাটে, ও যে শুনছে সেটা বুঝতে পারতাম ভীষণভাবে, মন’টা ভরে যেত ভালোলাগায়, জানিস? কিন্তু সামনে থেকে ওর ভুলে যাওয়া’টাই যেন খালি খালি চোখে পড়তে লাগল…”
পারো আস্তে করে হাত’টা রাখল হেমের মাথায়, বলল, “আমরা বুঝতে পারছি সোনা…”
পারো আস্তে করে হাত’টা রাখল হেমের মাথায়, বলল, “আমরা বুঝতে পারছি সোনা…”
একমিনিট চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইল হেম; তারপর হঠাত্ ঝিলিক দেওয়া হাসি হেসে চোখদুটো মুছে নিল একবার, বলল, “সো… দ্যাটস দ্য স্টোরি… আর দেয়ার ইস নাথিং স্যাডি স্যাডি ইন ইট রাইট নাও…”
“গ্রেট!”, পারো বলল, “আরে কিঁউ সোচে ইয়ে দিল কে আগে কয়া হোগা, ’গর কুছ নহি হোগা তো তজর্বা হোগা…”
“গ্রেট!”, পারো বলল, “আরে কিঁউ সোচে ইয়ে দিল কে আগে কয়া হোগা, ’গর কুছ নহি হোগা তো তজর্বা হোগা…”
সব্বাই হেসে ফেললাম। হেম’কে হাসতে দেখে ভাল্লাগছিল। ওকে যেটুকু চিনি, হাসিটা দেখে এটুকু বুঝছিলাম যে, কান্না-চাপা-হাসি এটা নয় অন্ততঃ, বললাম, “হ্যাঁ রে, অঙ্কুর জিগেস করেনি পরে কিছু?”
হেম চোখদুটোয় একটা দুস্টুমি খেলিয়ে বলল, “আই টোল্ড হিম দ্যাট আই লাভ সাম ওয়ান এলস…”
“যা তা…” হাসতে হাসতে বললাম আমি।
“উফফফ, আই আম রিয়েলি মিসিং রুদ্র নাও”, হাসতে হাসতে চোখে জল এনে ফেলে বলল পারো, “হেমের পিছনে লাগার ব্যাপারটাতে কিন্তু ও বরাবরের চ্যাম্পিয়ন… হি মিস্ড্ আ ফ্যাবিউলাস চান্স টুডে…”
দু’হাতে মুখ ঢাকল হেম।
“মিক্সড চাউমিন, চিক্কেন মাঞ্চুরিয়ন, গুলাব জামুন… টেবিল নাম্বার বাইইইস…” হাঁক পাড়লো ক্যান্টিনের ছোটু।
হেম চোখদুটোয় একটা দুস্টুমি খেলিয়ে বলল, “আই টোল্ড হিম দ্যাট আই লাভ সাম ওয়ান এলস…”
“যা তা…” হাসতে হাসতে বললাম আমি।
“উফফফ, আই আম রিয়েলি মিসিং রুদ্র নাও”, হাসতে হাসতে চোখে জল এনে ফেলে বলল পারো, “হেমের পিছনে লাগার ব্যাপারটাতে কিন্তু ও বরাবরের চ্যাম্পিয়ন… হি মিস্ড্ আ ফ্যাবিউলাস চান্স টুডে…”
দু’হাতে মুখ ঢাকল হেম।
“মিক্সড চাউমিন, চিক্কেন মাঞ্চুরিয়ন, গুলাব জামুন… টেবিল নাম্বার বাইইইস…” হাঁক পাড়লো ক্যান্টিনের ছোটু।
[ক্রমশঃ]