- Back to Home »
- একটু বড় গল্প »
- আবার যদি ইচ্ছে কর...
Posted by : Sayantari Ghosh
Tuesday, March 01, 2016
এক
অনেকদিন বাদে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ফিরলাম। জীবনের হিসেবে ফেললে ‘অনেক’ শব্দ’টা ভুল হয়ে যাবে অবশ্যই... তবে দূরত্ব আর গুরুত্বের হিসেবে কিন্তু একশ’ভাগ ঠিক! সেই যে অঝোর বৃষ্টি’তে চোখভর্তি ছেলেমানুষী জল নিয়ে শহর ছেড়েছিলাম... সে পাক্কা আড়াই বছর হল!
এবারেও ট্রেন থেকে নেমেছি ঝমঝমে বৃষ্টি’তে। ভাবা যায়? এই ফেব্রুয়ারির শেষে... ওই শুকনো দেশে...!? আসলে এ শহর জানে আমি বৃষ্টি ভালোবাসি। কারণে অকারণে সেই দু’বছরে কত যে বৃষ্টি নামিয়েছে আমায় অবাক করে দিয়ে, সে হিসেব ডায়েরিতে রাখতাম তখন... প্রতিবার নিখুঁত টাইমিং, নির্ভুল নিশানা!
হাঁটতে ইচ্ছে করছে... নর্থ গেটের সামনেটাতেই ছ’শো পনেরো থেকে নেমে পড়লাম... এখানে এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি গাছ... একেবারে সবুজে সবুজ... দিন’টা মঙ্গলবার, উইক’ডে... সব্বাই ক্লাসে, বা হস্টেলে এই অসময় বৃষ্টি’তে নির্ঘাত... রিংরোড প্রায় শুনশান...
গঙ্গা হস্টেলের সামনের বাস স্টপ’টা পেরোলো... সেই ধূ ধূ গরম’টা ছুঁয়ে গেল যেন হলকা দিয়ে... মনে পড়ে গেল বাহান্ন না তিপ্পান্ন’র তর্ক আর মনে এল অজ্ঞান হয়ে গেলে মানুষের শরীর’টা ঠিক কত’টা ভারি হয়ে যায়...
নর্মদার সামনের সেই পাথর’টার ফাঁকে উঁকি দিলাম পেরোতে পেরোতে... ‘ইয়ং গান্স্ অফ ইন্ডিয়া’ জ্বলজ্বল করে উঠল আমাকে চমকে দিয়ে... আধ সেকেন্ড বাদে টের পেলাম হেসে ফেলেছি অজান্তেই...
নর্মদা আর সাবরমতির মাঝের শুঁড়িপথ ধরলাম... এই আলো’টা বুঝি এখনও রাতে দপদপ করে? কাবেরির দিকে যাওয়ার চোরারাস্তা’টার সামনে কারা যেন পাঁচিল তুলে দিয়েছে... এখানে সেই ঝামরঝুলোর মত নিচু হয়ে ঝুঁকে আসা জঙলা লতাগুলো আরো গাঢ় করে দিয়েছে অন্ধকার... হঠাত্ হাতের খুব কাছে মনে হল আর কারো হাত... ছিটকে সরে এলাম... গলার কাছে ভয় না কান্না কি যেন একটা ধাক্কা দিচ্ছে ক্রমাগত...
তাপ্তীর সামনের ওপেন এয়ার ক্যান্টিন’টা দ্যাখা যাচ্ছে। সবক’টা চেয়ার নিশ্চয়ই ভিজে সপসপে, ভাবতে ভাবতে যেই না ঢোকা, দুটি খুব পরিচিত কন্ঠ সমস্বরে ঘোষণা করল, “লেট! অ্যাস ইউসুয়াল...!” ইউসুয়াল’ই বটে। আড্ডায়, ওয়ার্কশপে, ক্লাসে বা অ্যাসাইনমেন্ট করার তলবে দেরি করে পৌঁছানোর কত বিশ্বরেকর্ড আমি করেছি, সে খবর ওরা ছাড়া আর কে’ই বা রাখে...?
হেম আর পারো!
পরের পঁচিশ’টা মিনিট পাগলামি’তে ভেসে গেল একেবারে। যা বলছিলাম তার মধ্যে আদৌ কোন বক্তব্য ছিল না। ছিল খালি নিখাদ উচ্ছ্বাস... এতদিন বাদে এত কাছ থেকে এই চেনা মুখগুলো চোখের সামনে দ্যাখার উন্মাদ উচ্ছ্বাস! ছবি নয়, ওয়েবক্যাম নয়... একেবারে লাইভ আর এক্সক্লুসিভ!!
রাজুদা’র বহুচর্চিত ম্যাগি (বহু-আস্বাদিত’ও বটে) অর্ডার দেওয়া হল, যা কিনা জমাটি আড্ডার শাশ্বত সঙ্গী!
“মিসিং রুদ্র, না?” পারো বলল, “চারজনের গ্রুপ’টা ইস সামহাউ ইনকমপ্লিট উইদাউট দ্য ওনলি গাই...”
“ওকে ছাড়... ও চিরকালের ব্যস্ত মানুষ”, আমি বললাম।
“শোন শোন, তুই বল আগে...”, পারোর দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়ে হেম বলল, “দুম করে এমন সাঙ্ঘাতিক কাজ’টা এক্সিকিউট করে ফেলার ডিসিশন নিয়েই ফেললি তাহলে? বিয়ে, হ্যাঁ? কান্ড করলি বটে মিস্...”
“দুম করে?!”, রে রে করে উঠল পারো, “কাম অন মিস হেমাক্সি আইয়ার... যে গল্প’টা গত পাঁচ বছর ধরে দিল্লি, হরিয়ানা, অসম আর বেঙ্গল চারটে স্টেট জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে, যে’টা সল্ভ্ করতে গিয়ে আই ইউস্ড্ দ্য লাস্ট ড্রপ অফ মাই ইন্টেলিজেন্স আর টলারেন্স, সেটা ‘দুম করে’?! ইট অলমোস্ট রিচ্ড্ মাই ইলাস্টিক লিমিট ইয়ার... অন্য কেউ না লিখে থাকলে আমি পাক্কা একটা বই লিখে ফেলতাম...”
আমি আর হেম হো হো করে হাসছিলাম ওর ছটফটানি দেখে।
“আচ্ছা, তোর ব্যাপার’টা কি বলত হেম?”, পারো রেগে গিয়ে কথা ঘোরাতে চাইল, “হোয়াট হ্যাপেন্ড উইথ ইয়োর ‘পোস্টম্যান’ গাই? জিগেস করলে বলিসও না ঠিক করে ফোনে... হোয়াট ইস দ্য প্রবলেম আকচুয়ালি, হাঁ? কি হয়েছে... এই রিনি, চেপে ধর তো ওকে...”
“কি হবে? নাথিং! উই আর ফ্রেন্ডস্...”, ব্যস্ত হয়ে উত্তর দিল হেম।
“স্টিল...” দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বললাম, “ওই শব্দটা’ও বল্ সাথে করে... নইলে হয়?”
এবারেও ট্রেন থেকে নেমেছি ঝমঝমে বৃষ্টি’তে। ভাবা যায়? এই ফেব্রুয়ারির শেষে... ওই শুকনো দেশে...!? আসলে এ শহর জানে আমি বৃষ্টি ভালোবাসি। কারণে অকারণে সেই দু’বছরে কত যে বৃষ্টি নামিয়েছে আমায় অবাক করে দিয়ে, সে হিসেব ডায়েরিতে রাখতাম তখন... প্রতিবার নিখুঁত টাইমিং, নির্ভুল নিশানা!
হাঁটতে ইচ্ছে করছে... নর্থ গেটের সামনেটাতেই ছ’শো পনেরো থেকে নেমে পড়লাম... এখানে এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি গাছ... একেবারে সবুজে সবুজ... দিন’টা মঙ্গলবার, উইক’ডে... সব্বাই ক্লাসে, বা হস্টেলে এই অসময় বৃষ্টি’তে নির্ঘাত... রিংরোড প্রায় শুনশান...
গঙ্গা হস্টেলের সামনের বাস স্টপ’টা পেরোলো... সেই ধূ ধূ গরম’টা ছুঁয়ে গেল যেন হলকা দিয়ে... মনে পড়ে গেল বাহান্ন না তিপ্পান্ন’র তর্ক আর মনে এল অজ্ঞান হয়ে গেলে মানুষের শরীর’টা ঠিক কত’টা ভারি হয়ে যায়...
নর্মদার সামনের সেই পাথর’টার ফাঁকে উঁকি দিলাম পেরোতে পেরোতে... ‘ইয়ং গান্স্ অফ ইন্ডিয়া’ জ্বলজ্বল করে উঠল আমাকে চমকে দিয়ে... আধ সেকেন্ড বাদে টের পেলাম হেসে ফেলেছি অজান্তেই...
নর্মদা আর সাবরমতির মাঝের শুঁড়িপথ ধরলাম... এই আলো’টা বুঝি এখনও রাতে দপদপ করে? কাবেরির দিকে যাওয়ার চোরারাস্তা’টার সামনে কারা যেন পাঁচিল তুলে দিয়েছে... এখানে সেই ঝামরঝুলোর মত নিচু হয়ে ঝুঁকে আসা জঙলা লতাগুলো আরো গাঢ় করে দিয়েছে অন্ধকার... হঠাত্ হাতের খুব কাছে মনে হল আর কারো হাত... ছিটকে সরে এলাম... গলার কাছে ভয় না কান্না কি যেন একটা ধাক্কা দিচ্ছে ক্রমাগত...
তাপ্তীর সামনের ওপেন এয়ার ক্যান্টিন’টা দ্যাখা যাচ্ছে। সবক’টা চেয়ার নিশ্চয়ই ভিজে সপসপে, ভাবতে ভাবতে যেই না ঢোকা, দুটি খুব পরিচিত কন্ঠ সমস্বরে ঘোষণা করল, “লেট! অ্যাস ইউসুয়াল...!” ইউসুয়াল’ই বটে। আড্ডায়, ওয়ার্কশপে, ক্লাসে বা অ্যাসাইনমেন্ট করার তলবে দেরি করে পৌঁছানোর কত বিশ্বরেকর্ড আমি করেছি, সে খবর ওরা ছাড়া আর কে’ই বা রাখে...?
হেম আর পারো!
পরের পঁচিশ’টা মিনিট পাগলামি’তে ভেসে গেল একেবারে। যা বলছিলাম তার মধ্যে আদৌ কোন বক্তব্য ছিল না। ছিল খালি নিখাদ উচ্ছ্বাস... এতদিন বাদে এত কাছ থেকে এই চেনা মুখগুলো চোখের সামনে দ্যাখার উন্মাদ উচ্ছ্বাস! ছবি নয়, ওয়েবক্যাম নয়... একেবারে লাইভ আর এক্সক্লুসিভ!!
রাজুদা’র বহুচর্চিত ম্যাগি (বহু-আস্বাদিত’ও বটে) অর্ডার দেওয়া হল, যা কিনা জমাটি আড্ডার শাশ্বত সঙ্গী!
“মিসিং রুদ্র, না?” পারো বলল, “চারজনের গ্রুপ’টা ইস সামহাউ ইনকমপ্লিট উইদাউট দ্য ওনলি গাই...”
“ওকে ছাড়... ও চিরকালের ব্যস্ত মানুষ”, আমি বললাম।
“শোন শোন, তুই বল আগে...”, পারোর দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়ে হেম বলল, “দুম করে এমন সাঙ্ঘাতিক কাজ’টা এক্সিকিউট করে ফেলার ডিসিশন নিয়েই ফেললি তাহলে? বিয়ে, হ্যাঁ? কান্ড করলি বটে মিস্...”
“দুম করে?!”, রে রে করে উঠল পারো, “কাম অন মিস হেমাক্সি আইয়ার... যে গল্প’টা গত পাঁচ বছর ধরে দিল্লি, হরিয়ানা, অসম আর বেঙ্গল চারটে স্টেট জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে, যে’টা সল্ভ্ করতে গিয়ে আই ইউস্ড্ দ্য লাস্ট ড্রপ অফ মাই ইন্টেলিজেন্স আর টলারেন্স, সেটা ‘দুম করে’?! ইট অলমোস্ট রিচ্ড্ মাই ইলাস্টিক লিমিট ইয়ার... অন্য কেউ না লিখে থাকলে আমি পাক্কা একটা বই লিখে ফেলতাম...”
আমি আর হেম হো হো করে হাসছিলাম ওর ছটফটানি দেখে।
“আচ্ছা, তোর ব্যাপার’টা কি বলত হেম?”, পারো রেগে গিয়ে কথা ঘোরাতে চাইল, “হোয়াট হ্যাপেন্ড উইথ ইয়োর ‘পোস্টম্যান’ গাই? জিগেস করলে বলিসও না ঠিক করে ফোনে... হোয়াট ইস দ্য প্রবলেম আকচুয়ালি, হাঁ? কি হয়েছে... এই রিনি, চেপে ধর তো ওকে...”
“কি হবে? নাথিং! উই আর ফ্রেন্ডস্...”, ব্যস্ত হয়ে উত্তর দিল হেম।
“স্টিল...” দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বললাম, “ওই শব্দটা’ও বল্ সাথে করে... নইলে হয়?”
(ক্রমশঃ)