Popular Post

Posted by : Sayantari Ghosh Tuesday, March 15, 2016



জানেন ত, আজকে স্বীকারোক্তি দিবস...? (কি যেন একটা ইংরিজি নামও ছিল...ভুলে গেছি!)
একখানা সিরিয়াস স্বীকারোক্তি করা নাকি আজকের দিনে যাকে বলে একেবারে মাস্ট! “সিরিয়াস স্বীকারোক্তি” বুঝলেন না? মানে ওই ধরুন “ছোটবেলায় আমি ধুলোবালি, মাটি, ছাই এসব হাতে পেলেই বেমালুম খেয়ে ফেলতাম” বা “গতকাল আমি ২১৫ নয়,৭১ নম্বর বাসে উঠেছিলাম আসলে” কিম্বা “ওই কাঁচের ফুলদানিটা... মানে আমারই হাত থেকে পড়ে...” এই জাতীয় অ-সিরিয়াস স্বীকারোক্তি সব বাতিলের খাতায়... বুঝলেন এইবারে?
এখন আপনারা ত জানেন (?) এসব দিনক্ষণ আমি কি নিষ্ঠার সাথে মেনে চলি! অনেক ভেবে দেখলাম, কাজটা যখন করতেই হবে তখন ব্লগটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা... আমার ভ্যাজর-ভ্যাজরে চূড়ান্ত বিরক্ত হলেও কেউ আমায় চাঁদা তুলে গণপিটুনি অন্ততঃ দিতে পারবে না এখানে!
অতএব......শুরু করি তাহলে...!
শুরু'টা করবো একটা প্রশ্ন দিয়ে। আচ্ছা, মনে করুন, আপনাকে জিগেস করলুম যে একখানা এরকম টপিক বলুন দেখি, যেটা নিয়ে আপনার বেসিকালি কিচ্ছু এসে যায় না, কিন্তু তবু  কেউ সেই নিয়ে গল্প শোনাতে চাইলে আপনি নন্দলালের মালাই চমচম খাওয়ার অফার'ও হেলায় উপেক্ষা করে বসে পড়বেন? নিশ্চয়ই এরকম পছন্দের বিষয় কিছু আছে... যেমন ধরুন ভূত? বা ভিন গ্রহের প্রাণী...? বা ধরুন, দাম্পত্য-কলহ? আছে নিশ্চয়ই...? আমার তেমনই বহুদিনের আকর্ষণ একটি শব্দের প্রতি ... শব্দটি হল “ক্রাশ”! এই সব গল্পের চুম্বকে আমি এক্কেবারে বাঁধা, সে মায়া বোধহয় এ-জন্মে আর কাটিয়ে উঠতে পারব না!!! আমি ক্রাশের আড্ডা বড্ড ভালোবাসি, আর সে সব আড্ডা বসলেই আমার মনের অন্ধকার আউটহাউসের বাসিন্দা আমারই অংশবিশেষ কোনো এক দুরাত্মা (তার কদমছাঁট চুল, মারাত্মক লালচে চোখ আর মাথায় দুখানা ছোট্ট ছোট্ট শিং!! তাকে আমি মাঝেমধ্যেই মানসচক্ষে দেখতে পাই!) বসে বসে বিচ্ছিরিভাবে দাঁত বের করে হাসে আর বলে, “ভাবছিস কি?? সবাই এখানে ক্রাশের গল্প শোনাবে...?! খুব মজা, না? খ্যাঁক খ্যাঁক, খোঁক খোঁক...”
আজ বড় ভালো দিন— মিথ্যে বলব না— ওই শিংওয়ালা শয়তানটার কথার পুরোপরি সত্যি— ক্রাশ-টাশের গল্প আমার ভাই বেজায় ভাল লাগে— আপনারা হয়তঃ বিশ্বাস করবেন না, ভাববেন বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছি, কিন্তু সেরকম গল্প বলার লোক পেলে আমি সারাজীবনটা খাটের ওপর এলিয়ে বসে, বাদামভাজা খেয়ে আর ক্রাশের গল্প শুনে মজাসে কাটিয়ে দিতে পারি— এসব রোমাঞ্চকর কাহিনীর আমি চিরন্তন একনিষ্ঠ শ্রোতা!
কিন্তু ভাল শ্রোতা হওয়ার একটা গুরুতর অসুবিধা আছে। তাতে আপনি চিরকাল শুনতেই থাকেন, কেউ আর আপনার কাছে কখনো কিচ্ছুটি শুনতে চায় না!
আমারও সেই একই ঝামেলা! রাজ্যের লোকজন এসে আমাকে রকমারি গল্প শুনিয়ে যায়, আমিও শোনার আনন্দে সেসব গোগ্রাসে গিলে ফেলি... কিন্তু তাই বলে বুঝি আমার বলার মত কিছু থাকেনা? আমার বুঝি এক-দুটো ক্রাশের গল্প থাকতে নেই? যাচ্ছেতাই একেবারে...!
সে যাই হোক, আজ তাই আমার সিরিয়াস স্বীকারোক্তিটি আমার প্রথম ক্রাশ বিষয়ক একখানি দূর্লভ কাহিনী। দীর্ঘকাল যাবত্ পুরনো গল্পের বস্তায় পড়ে থাকার দরুন পচে-টচে গেলে অবিশ্যি জানিনে...!(শুনেছি স্বীকারোক্তি ব্যাপারটা নাকি বেশ কষ্টকর; আমার এরকম ভয়ানক আনন্দ হচ্ছে কেন, কে জানে!)
প্রথম ক্রাশ জিনিসটা আমার বান্ধবীদের মধ্যে ঘটে গেছিল ওই ক্লাস সেভেন-টেভেন নাগাদ। আমি সেই সময় ঠিক কি করছিলাম অনেক চেষ্টা করেও কখনও সেটা মনে পড়েনা! ওই সবার গপ্পোগাছা শুনতে গিয়েই কাল হয়েছিল হয়তঃ...
আমার বাবার ইস্কুলের ছাত্র'রা সকাল-বিকেল দঙ্গল বেঁধে আমাদের বাড়ি আসত মাঝে মাঝেই। সেদিকেও আমার তেমন উত্সাহ ছিল না। কিন্তু...... ব্যাতিক্রমী ঘটনাটি ঘটল! তখন আমি ক্লাস নাইন। এক শনিবারে স্কুলের পর ঘন্টাদেড়েক গানের রিহার্সাল করে, খিঁচড়ানো মেজাজে, স্কুলড্রেসের হলুদ শাড়িতে হোঁচট খেতে খেতে বাড়ি ফিরছি। মাথায় তখন খালি ঘুরছে পরদিনের টিউশনের পরীক্ষাটার কথা...

হঠাত্ রাস্তার পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, “আচ্ছা, সুজনস্যারের বাড়িটা কোনদিকে?”
গলার স্বরের মালিকের দিকে চোখ পড়তেই আমি থ! বুকের মধ্যে একসাথে হাজারখানা কাঁসর-ঘন্টা বাজতে শুরু করল হঠাত্! একি দেবদূত নাকি রে বাবা? কিছুক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে থাকার পর বুঝলাম যে, না, এ দেবদূত নয়; দেবদূতরা CBZ বাইক চালায় না!
সে আমার এই বিহ্বলতা লক্ষ্য করেছিল কিনা জানিনা। সে আবার বলল, “আমি সুজনস্যারের বাড়িটা খুঁজছিলাম; আপনি চেনেন?”
কোনোক্রমে হাত উঠিয়ে বাড়ির দরজাটা দেখিয়ে দিলাম। এটুকুও বলা গেল না যে সেতো আমাদেরই বাড়ি..! যাকে বলে একেবারে দর্শন এবং সম্মোহন... কয়েক ন্যানোসেকেন্ড সময় লেগেছিল হয়তঃ...
পরে জেনেছিলাম বাপির কোন এক চেনা ডাক্তারবাবু তাঁর তনয়রতনটির জয়েন্টের স্পেশাল কোচিং-এর জন্য বাপিকে রিকোয়েস্ট করেছেন। বাপিকে সাধারণতঃ এ ধরনের অনুরোধের ফাঁদে ফেলা যায় না; এবারেই কি করে না জানি অঘটনটা ঘটে গেছে। ব্যাপারটা শোনামাত্র আমার উত্তেজিত প্রাণের মধ্যে একটা দৈব-নির্দেশিত ঘটনার ইঙ্গিত আরো স্পষ্ট হয়ে গেল এক্কেবারে! আর তার ওপরে যখন শুনলাম যে প্রতি শনিবারই সাড়ে তিনটে নাগাদ তার আগমন ঘটবে, তখন এত আনন্দ রাখব কোথায়, এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম!
এরপর থেকে শুরু হল এক অদ্ভুত রুটিন! বাড়ির সবাইকে দিবানিদ্রার সুযোগ দিয়ে স্বার্থত্যাগী (?) আমি শনিবারের ভর দুপুরগুলো অঙ্ক খাতা নিয়ে দিন-জাগা শুরু করলাম! মা তো মহাখুশি! মাধ্যমিকের বছর মেয়ে দুপুরে টানটান পাঁচঘন্টা না ঘুমিয়ে অঙ্ক খাতা নিয়ে বসলে মায়ের খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর আমি? সেই “পাপা কেহতে হ্যায়...” গানের স্টাইলে সারা দুপুর “চমকিত মন, চকিত শ্রবণ, তৃষিত আকুল আঁখি” নিয়ে দুরুদুরু বক্ষে বসে থাকতাম— অপেক্ষা— কখন সে আসবে আর আমি দরজাটা খুলে দেব! সে রোমাঞ্চ ভাষায় বলার মতন অত বাংলা আমি শিখিনি এখনও...!
এতদূর শুনে যদি আপনি একটা দারুন প্রেমের গল্পের গন্ধ পাচ্ছেন, তাহলে মহাভুল করছেন মশাই! গল্পের মুখ্য পাত্রীটি যে আমি সেটা বুঝি নির্ঘাত ভুলে মেরে দিয়েছেন? মাসছয়েক ধরে আমি ওই দরজা খোলার কাজটি বড় দায়িত্ব নিয়ে, ভীষণ নিপুণতার সাথে করে গেলাম আর তারপর...? 
তারপর আর কি? জয়েন্ট পেয়ে গিয়ে সে যথারীতি বিদায় নিল!
সেই দুঃখে মাসখানেক মুহ্যমান হয়ে ছিলাম। আমার বন্ধুরা বলে সেসময় নাকি আমার মধ্যে বেশ একটা বৈরাগ্য-গোছের ভাব এসছিল; ওদের নাকি ভয় হয়েছিল যে তার নামের মালা জপ করেই বোধহয় আমার বাকি জীবনটা কেটে যাবে... যাই হোক, ঘাড়ের ওপর হুড়মুড়িয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষাটা এসে গিয়ে আমার বৈরাগ্য-টৈরাগ্যের সব্বোনাশ করে দিলে... নইলে আমায় নিয়েও কত্তো কবিতা-উপন্যাস লেখা হত, দেখতেন!
শেষমেশ আর একটা কথা বলি। মাধ্যমিকে অঙ্কে সঅঅব ঠিক করে এসছিলাম; তবু একশ হয়নি। প্রথমে দুঃখ পেলেও পরে বুঝেছিলাম এ আমারই পাপের ফল বই আর কিছু নয়। শনিবারের ওই দুপুরগুলো অঙ্ক করার ব্যাপারটা যে শুধুই গল্প, সে ত আর মা-বাপি কোনোদিন জানতে পারেনি! রীতিমত ভয় করত মাঝেমাঝে, যে কোনদিন মা এসে ক্যাঁক করে চেপে ধরবে, “প্রতি শনিবার অত্তো অত্তো অঙ্ক করলে তো দশ-বিশ কিলো খাতা জমে যাবার কথা! কোথায় সে সব? দেখি...” ইত্যাদি! যা হোক, সে দুর্দিন আমার আসেনি কখনও।
তা এই হল গিয়ে আমার আজকের স্বীকারোক্তি! আপনার কিন্তু অসাধারণ ‘ইয়ে’.... এখনো পড়ে যাচ্ছেন!! তো এতটা যখন পড়লেনই, আর একটা কাজও করে ফেলুন না! আজ দিনটা সত্যিই খুব ভালো। আপনিও একটা এই জাতের স্বীকারোক্তি করেই ফেলুন না বুকের সমস্ত সাহস একজোট করে...! বলছি শুনুন, কিউপিডের নেকনজরে থাকবেন! বিশ্বাস করুন...

{ 1 comments... read them below or add one }

  1. Darun....tor o erokom hoto...!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ami bahbtam egulo bodh hoi amader moto cheleder 1 chetia adhikar....

    ReplyDelete

- Copyright © পাঁচমিশেলি - - Powered by Blogger - Designed by সায়ংতরী -