- Back to Home »
- সত্যিকারের গল্প »
- দ্য আনসিঙ্কেবল / দুই
Posted by : Sayantari Ghosh
Thursday, June 27, 2013
টাইটানিকের গল্পটা তো সক্কলের জানা। অনেকে হয়ত এটাও জানেন যে টাইটানিক'রা আসলে তিন বোন। অলিম্পিক,টাইটানিক আর ব্রিটানিক ছিল হোয়াইট ষ্টার লাইনের গর্বের তিন কন্যা;সিস্টার শিপ'স। সে সময়কার প্রযুক্তি, বিজ্ঞান আর শিল্পের সেরাটুকু দিয়ে জাহাজ তিনটিকে বানিয়েছিল হোয়াইট ষ্টার লাইন। ঘটনাচক্রে এমনি দাঁড়ায় যে দূর্ঘটনা প্রথম থেকে শেষ অব্দি পিছু ছাড়েনি এই তিন বোনের।
১৯১১'র জুন মাসে প্রথম জলে নামে অলিম্পিক। ৮০০ ফিটের চেয়েও বেশি দৈর্ঘ্যের প্রথম জাহাজ।সে বছরের'ই সেপ্টেম্বর মাসে সাউদাম্পটনে ধাক্কা খায় এইচ.এম.এস. হক জাহাজের সাথে। সাঙ্ঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুটি জাহাজই,তবে প্রাণে বেঁচে যান দুই জাহাজের সকল যাত্রীই;খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত দেহে বন্দরে নোঙর করে বিশালবপু অলিম্পিক।
পাক্কা দু'মাস লেগেছিল অলিম্পিকের সেরে উঠে আবার জলে নামতে। সেই ধাক্কা সামলে নিতে টাইটানিকের প্রথম যাত্রা এক মাস পিছিয়ে দেয় হোয়াইট ষ্টার লাইন। মার্চ ২০'র বদলে টাইটানিক সাউদাম্পটন বন্দর ছাড়লো এপ্রিল ১০,১৯১২;কে বলতে পারে, এক মাস আগে হলে হয়তঃ নিউ ইয়র্কে নোঙর'ও করত টাইটানিক? পাঁচ দিন পর এপ্রিল ১৫'তে আইসবার্গের ধাক্কায় ১৫০০ টি প্রাণ সঙ্গে করে আতলান্তিকের তলিয়ে যায় টাইটানিক।
আসলে ব্রিটানিকের নাম হওয়ার কথা ছিল জাইগান্টিক। আকারে,আয়তনে সে ছিল বড় দুই বোনের বাড়া।কিন্তু টাইটানিকের মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় হোয়াইট ষ্টার লাইন আর ওই দূর্ধর্ষ নামের দুঃসাহস দ্যাখাতে পারেনি। এম্নিতেও ততদিনে আকাশে উঁকি দিয়েছে বিশ্বযুদ্ধের মেঘ,অনেক স্লথ হয়ে গেছে জাইগান্টিকের জলে নামার প্রস্তুতি। সেপ্টেম্বর ১৯১৪'র বদলে ডিসেম্বর ১৯১৫ তে প্রথম যাত্রায় পাড়ি দিল সে,ততদিনে ব্রিটিশ জলবাহিনী অধিগ্রহন করে নিয়েছে তাকে,তার কাজ হয়েছে জলযুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবা,নাম বদলে হয়ে গেছে এইচ.এম.এইচ.এস. ব্রিটানিক, হিস ম্যাজেস্টিস হস্পিটাল শিপ ।
প্রায় ১৫০০০ আহত যোদ্ধা'কে ঘরে পৌঁছেছিল ব্রিটানিক মাত্র পাঁচটি সমুদ্রযাত্রায়। ষষ্ঠ বার আর ঘরে ফেরে নি সে। নভেম্বর ২১,১৯১৬'র সকালে একটি মাইন'এর সাথে হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে মাত্র ৫৫ মিনিটের মধ্যে তলিয়ে যায় বিশাল ব্রিটানিক। সেদিন আরোহীদের মধ্যে কোন আহত বা অসুস্থ কেউ ছিলেন না। ১১০০ জনের ভেতর ৩০ জন প্রাণ হারান, আর সঙ্গে হারিয়ে যায় অলিম্পিক-পরিবারের শেষ সদস্য'টি।
এই গল্পের সাথে একজনের কথা না বললে অনুচিত কাজ করা হয়। ভায়োলেট জেসপ। ইনি হোয়াইট ষ্টার লাইনে কর্মরতা ছিলেন জাহাজের পরিচারিকা হিসেবে। কাকতালীয় হলেও সত্যি কথা যে অলিম্পিক, টাইটানিক আর ব্রিটানিকের দূর্ভাগ্যের দিনগুলিতে জেসপ জাহাজে ছিলেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, তিনটি দূর্ঘটনার'ই তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী! এবং প্রতিবার'ই চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি,অব্যবস্থা আর প্রাণহানির মধ্যেও তিনি দিব্বি বেঁচে ঘরে ফিরে আসেন! হয়তঃ সমুদ্রের লোনা জলে ফুসফুস ভরে ফেলে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া কপালে ছিল না জেসপের,দীর্ঘ সুস্থ জীবন লেখা হয়েছিল বিধাতার দপ্তরে তার জন্যে। কথায় বলে না, রাখে হরি মারে কে?
হরির রক্ষা করার প্রসঙ্গ উঠলো যখন,তখন আরেকটা অদ্ভূত গল্প বলে আজকের মত শেষ করি।
ওয়েলসের কাছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার লম্বা একটি জোয়ার জলের নদীখাতের স্থানীয় নাম দ্য মেনাই স্ট্রেইট।ডিসেম্বর ৫, ১৬৬৪, মেনাই স্ট্রেইটে একটি জাহাজডুবি হয়। মারা যান একজন আরোহী বাদে বাকি ৮১ জন মানুষ। আবার একই তারিখ। ডিসেম্বর ৫, সাল ১৭৮৫; মেনাই স্ট্রেইটে ডুবে যায় আরো একটি যাত্রীবাহী জাহাজ।ষাটজন মারা যান, জীবিত উদ্ধার করা যায় আবারও মাত্র একজন'কে। ডিসেম্বর ৫, ১৮২০, একই জায়গায় আরো একটি জাহাজ দূর্ঘটনা। মৃতের সংখ্যা এবার ২৫, অদ্ভূত ভাবে এবারেও প্রাণে বেঁচে যান একজন মাত্র যাত্রী।
স্থান আর কালের তথ্যটুকু তো দিলাম,পাত্র বিষয়ক সেরা তথ্য'টা এবার বলি।
যারা বেঁচে যান,ঘটনাচক্রে তাঁদের প্রত্যেকের নাম ছিল হিউ উইলিয়মস!
অবাক কান্ড না? টাইটানিক'কে আনসিঙ্কেবল বলে দাবী করেছিল হোয়াইট ষ্টার লাইন; এই গল্প তবে কি দাবী করবে? হিউ উইলিয়মস... দ্য আনসিঙ্কেবল...?
Good One... Liked It :-)
ReplyDelete