Showing posts with label পুঁথি-পাঁচালি-পুরাণের গল্প. Show all posts
পুষ্পপুরাণঃ পারিজাত
By : Sayantari Ghosh
সে তো মর্ত্যের নয়। স্বর্গের ফুল... গোলোকে বিষ্ণুর সোনার সিংহাসনের আকাশ সুগন্ধে মাতিয়ে রাখে... আর কারণে-অকারণে পায়ের কাছে ঝরে পড়ে পড়ে ধবধবে গালিচা বিছিয়ে দেয়... তাই তো অমন নাম... পারিজাত...!
পারিজাত’কে মর্ত্যে আনার কাজ’টি করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ... করেছিলেন বললে ভুল হবে... একরকম করতে বাধ্য হয়েছিলেন...!!
শুনেই চমক লাগল বুঝি...? ভাবছো,শ্রীকৃষ্ণ তো স্বয়ং বিষ্ণুর অবতার... কত কি কঠিন কঠিন কাজই না করে গেছেন তিনি... তাঁকে বাধ্য হতে হল... এ অসম্ভব কাজ’টি করল কে???
কে আবার...? তাঁর দুই রাণী... রুক্মিনী আর সত্যভামা...!
সে গল্পটির শুরুও ঝগড়াঝাঁটি দিয়ে... সেই একই ঝগড়া... কে বড়...? যার আসল মানে হল, শ্রীকৃষ্ণের সকল রাণীর মধ্যে প্রিয়তমা কে? সত্যভামা? না কি রুক্মিনী?
দুজনেই জোর গলায় রাজ্যের সব রকমারী দাবী করতে লাগলেন...
একজন বলেন,তাঁর বলার অপেক্ষা... কৃষ্ণ গজদন্তের প্রাসাদ গড়িয়ে দেবেন একরাত্তিরের মধ্যে...
আর একজন বলেন,তাঁর মুখের কথা খসলেই কৃষ্ণ এক’শ পক্ষীরাজে টানা রথ এনে দাঁড় করিয়ে দেবেন দুয়োরের পাশে...
এমনি করে কথায় কথায় কথা বেড়ে বেড়ে পাহাড়প্রমাণ হয়ে গেল...
দুজনেই জোর গলায় রাজ্যের সব রকমারী দাবী করতে লাগলেন...
একজন বলেন,তাঁর বলার অপেক্ষা... কৃষ্ণ গজদন্তের প্রাসাদ গড়িয়ে দেবেন একরাত্তিরের মধ্যে...
আর একজন বলেন,তাঁর মুখের কথা খসলেই কৃষ্ণ এক’শ পক্ষীরাজে টানা রথ এনে দাঁড় করিয়ে দেবেন দুয়োরের পাশে...
এমনি করে কথায় কথায় কথা বেড়ে বেড়ে পাহাড়প্রমাণ হয়ে গেল...
খবর পেয়ে কৃষ্ণ যখন এসে পৌঁছোলেন,তখন সেসব দাবীর বহর মর্ত্যলোক ছাড়িয়ে দেবলোকে উঁকিঝুঁকি মারছে...!
দুজনেই এসে চোখে কাজলজল উজাড় করে,মুখভার করে বললেন,
“যদি ওকে চাও ওর কাছে থাকো,আমি তবে ছাড়ি হাত...
আর,
যদি ভালোবাসো তবে এনে দাও স্বর্গের পারিজাত...”
আর,
যদি ভালোবাসো তবে এনে দাও স্বর্গের পারিজাত...”
সব্বোনাশ!! শুনেই তো শ্রীকৃষ্ণের চক্ষু চড়কগাছ! স্বর্গের পারিজাত!!! তাকে পৃথিবীতে আনাই তো মহাশক্ত কাজ! ‘এনে দাও’ বললেই তো আর তার এনে দেওয়া যায়না... তার উপর এনে দেবেনই বা কাকে? রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে তো আরেকদিকে... আর তার চেয়েও বড় কথা, প্রাণের ভয় বলেও তো একটা বস্তু আছে কৃষ্ণঠাকুরের...!
ভাবনায় ঘুম উড়ে গেল শ্রীকৃষ্ণের চোখের পাতা থেকে... রাতভর ঘুম আসেনা... কি করেন... কি করেন... কি করে সামলানো যায় দু’জনকে...
শেষমেশ অনেক ভেবে ভোররাতের দিকে এক দারুণ ভাবনা ঝিলিক দিয়ে উঠল... একগাল হেসে শ্রীকৃষ্ণ চললেন পারিজাত আনতে।
**********************************************************************
ভোরবেলা, ঘুম ভেঙে সত্যভামা দেখলেন যে তাঁর আঙিনার দক্ষিণকোণের পাঁচিলধার আলো করে রয়েছে অ-পূ-র্ব এক অজানা ফুলের গাছ... সারা প্রাসাদ ম ম করছে স্বর্গীয় সুরভিতে...
আর পাঁচিলের ও'ধারে, রুক্মিনীর উঠোনের উত্তরকোণের শিশিরভেজা ঘাস জুড়ে বিছিয়ে আছে সাদার উপর ছোট্ট ছোট্ট কমলা ফুটকি দেওয়া একখান নরম গালিচা...
আর পাঁচিলের ও'ধারে, রুক্মিনীর উঠোনের উত্তরকোণের শিশিরভেজা ঘাস জুড়ে বিছিয়ে আছে সাদার উপর ছোট্ট ছোট্ট কমলা ফুটকি দেওয়া একখান নরম গালিচা...
Tag :
পুঁথি-পাঁচালি-পুরাণের গল্প,
পুষ্পপুরাণঃ কেতকী
By : Sayantari Ghoshআচ্ছা, বল দেখিনি, কেতকী ফুলে পুজো হতে দেখেছো কখনও...? অথচ অমন গন্ধ ক’টা ফুলের আছে বল তো? তবুও কেন এরকম...? হু হু... বাবা... গল্প আছে, গল্প... বসেই তো আছো দেখচি... শুনবে না কি...?
তাহলে বলি...?
ব্যাপারটা হল গিয়ে সে একবারের কথা... হঠাৎএকদিন সকালে মহাদেবের ঘুম ভাঙল মহা-চিত্কার চেঁচামেচিতে... চোখ রগড়ে দ্যাখেন কি,না,ব্রহ্মাঠাকুর আর বিষ্ণুঠাকুরের মধ্যে সাঙ্ঘাতিক ঝামেলা বেঁধেছে... দিনের কাজকর্ম কিচ্ছু শুরু হয়নি... ঝগড়ায় বিশ্বদুনিয়া সব তোলপাড়,তটস্থ...!!
তাহলে বলি...?
ব্যাপারটা হল গিয়ে সে একবারের কথা... হঠাৎএকদিন সকালে মহাদেবের ঘুম ভাঙল মহা-চিত্কার চেঁচামেচিতে... চোখ রগড়ে দ্যাখেন কি,না,ব্রহ্মাঠাকুর আর বিষ্ণুঠাকুরের মধ্যে সাঙ্ঘাতিক ঝামেলা বেঁধেছে... দিনের কাজকর্ম কিচ্ছু শুরু হয়নি... ঝগড়ায় বিশ্বদুনিয়া সব তোলপাড়,তটস্থ...!!
কি হয়েছে? না, সেই পুরোনো সমস্যা... কে বড়,কার দরকার বেশি,সেই নিয়ে মনকষাকষি... তারপর একদুটো রাগারাগির কথা... বাড়তে বাড়তে সমস্যা এখন তুঙ্গে...!!
মহাদেব বুঝলেন তাঁকে ছাড়া গতি নেই... দুজনেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন,যুক্তির থেকে উপরে গলা তুলেছে অযৌক্তিক সব কথা... একটা তুলনা করে দু’জনকে বুঝিয়ে দিতে হবে,দু’জনেই সমান... এ’ছাড়া উপায় নেই...
যেই ভাবা সেই কাজ। সটান গিয়ে দাঁড়ালেন দু’জনের মাঝে...বললেন “শান্ত হোন আপনারা...পরীক্ষা করেই দেখা যাক না,কে বড়...”
মূহুর্তের মধ্যে দুই দেবতার মাঝে দাঁড়ানো মহাদেব একখানা বি-শা-আ-আ-ল আলোর স্তম্ভ হয়ে গেলেন... আকাশ জুড়ে গমগম করে উঠল তাঁর কন্ঠস্বর...
“একজন উর্ধ্বপানে,একজন অধোপানে যান,
যে আগে পাবেন শেষ, তার জয় ... করুন প্রস্থান...”
ব্যাস... আর পায় কোথায়...? তক্ষুনি দু’জনে দু’দিকে লাগালেন ছুট...!!!
বিষ্ণু যাচ্ছিলেন পাতালের দিকে... আলোর স্তম্ভের পাশে পাশে চললেন,চললেন আর চললেন... কিন্তু শেষ কোথায়...? যতদূর চোখ যায় সে আলো আগে, আরো আগে এগিয়ে গেছে... বিষ্ণুর জোরে জোরে শ্বাস পড়তে লাগল... হাঁফিয়ে গেলেন একেবারে... নাঃ! আর পারা যায় না... এ আলেয়ার পিছু করার চে’ফিরে যাওয়াই ভালো... এ নির্ঘাত্ মহাদেব কিছু ফন্দি ফেঁদেছেন...! আর দেরী না করে ফেরার পথা পা বাড়ালেন বিষ্ণু।
ও’দিকে ব্রহ্মার অবস্থাও তথৈবচ! হাঁফিয়ে-ঝাঁপিয়ে ঘেমে-নেয়ে গেছেন... কি করবেন ভাবছেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে,হঠাৎ দ্যাখেন ফুলের রানী কেতকী উপর থেকে হাওয়ায় ভেসে ভেসে নেমে আসছে। ব্রহ্মার মাথায় এক দুষ্টুবুদ্ধি চাপলো। কেতকীকে খপ করে ধরে বললেন, “চল আমার সাথে,বিষ্ণুকে বলবে যে তোমায় আমি এই আলোর স্তাম্ভের শিখর থেকে নিয়ে এসেছি...”
ভয় পেয়ে কেতকী বলতে গেল বাধা দিয়ে, “ওমা,সে কি??! কিন্তু...”
“চুউউপ! যা বলছি বলবে, নাহলে না...” গর্জে ওঠেন ব্রহ্মা! ভয় পেয়ে একেবারে সিঁটিয়ে গেল কেতকী।
ছুটে ছুটে বিষ্ণুর কাছে ফিরে এলেন ব্রহ্মা। তাঁর চোখের সামনে কেতকী কে ধরে বললেন, “হেঃ হেঃ,এই যে... দ্যাখো দ্যাখো,প্রমাণ দ্যাখো,আমি শেষ ছুঁয়ে ফিরে এসেছি... কেতকী তো সেখানেই থাকে... কি হে, বল?” বলে কেতকীর দিকে তাকান তিনি...
ও’দিকে ব্রহ্মার অবস্থাও তথৈবচ! হাঁফিয়ে-ঝাঁপিয়ে ঘেমে-নেয়ে গেছেন... কি করবেন ভাবছেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে,হঠাৎ দ্যাখেন ফুলের রানী কেতকী উপর থেকে হাওয়ায় ভেসে ভেসে নেমে আসছে। ব্রহ্মার মাথায় এক দুষ্টুবুদ্ধি চাপলো। কেতকীকে খপ করে ধরে বললেন, “চল আমার সাথে,বিষ্ণুকে বলবে যে তোমায় আমি এই আলোর স্তাম্ভের শিখর থেকে নিয়ে এসেছি...”
ভয় পেয়ে কেতকী বলতে গেল বাধা দিয়ে, “ওমা,সে কি??! কিন্তু...”
“চুউউপ! যা বলছি বলবে, নাহলে না...” গর্জে ওঠেন ব্রহ্মা! ভয় পেয়ে একেবারে সিঁটিয়ে গেল কেতকী।
ছুটে ছুটে বিষ্ণুর কাছে ফিরে এলেন ব্রহ্মা। তাঁর চোখের সামনে কেতকী কে ধরে বললেন, “হেঃ হেঃ,এই যে... দ্যাখো দ্যাখো,প্রমাণ দ্যাখো,আমি শেষ ছুঁয়ে ফিরে এসেছি... কেতকী তো সেখানেই থাকে... কি হে, বল?” বলে কেতকীর দিকে তাকান তিনি...
বেচারী কেতকী! কি আর করে...! “হ্যাঁ...” বলে যেই না মাথা নেড়েছে,অম্নি মহাদেব রেগে আগুন হয়ে মূর্তিমান হলেন... এমন মিথ্যাচার...! তাও আবার স্বয়ং মহাদেবের সামনে...!!
তত্ক্ষণাৎ শাপ দিলেন মহাদেব,
“সব সুরভী মরবে কেঁদে আমার পরশ বিনে,
পুজোর ঘরের দুয়োর’টি তুই কক্ষনো ছুঁবি নে...”
ব্যাস...! মহাদেবের কথা,এক কথা...! কেতকী অনেক কেঁদেছিল,কোন ফল হয় নি... সেই লঘুপাপের গুরুদন্ড মাথায় নিয়ে কেতকী আজও পুজোর ঘরের দুয়োর ছোঁয় না...।
এইরকমের একটা গপ্পো পারিজাতেরও আছে...
পারিজাত... মানে আদর করে যাকে শিউলি নামে ডাক দাও,সেই ফুল... সে নাহয় আরেকদিন শোনাবো...
পারিজাত... মানে আদর করে যাকে শিউলি নামে ডাক দাও,সেই ফুল... সে নাহয় আরেকদিন শোনাবো...
Tag :
পুঁথি-পাঁচালি-পুরাণের গল্প,
পুষ্কর
By : Sayantari Ghoshব্রহ্মাঠাকুরের নাম তো তোমরা সবাই জানো...!! বিশ্বসংসারের স্রষ্টা বলে, ত্রিদেবের প্রথমজন বলে তাঁর ভয়ানক নামডাক...! সাদা পদ্মফুলের ওপরে বসে থাকেন, সাদা রাজহংসে করে যাতায়াত করেন,আর সবচে'বড় কথা সরস্বতী মা ঠাকরুনের মতন অমন বিদূষী যার সঙ্গে,তাঁর নামডাক হবে নাই বা কেন?
কিন্তু একটা গোলমেলে প্রশ্ন আছে আমার...
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই নিয়ে তো ত্রিদেব! শিবঠাকুরের মন্দির তো তোমার পাড়াতেই আছে... মাঝের জনের মন্দিরও দেখেছো হয়তঃ অনেক...
কিন্তু... ব্রহ্মাঠাকুরের মন্দির??? দেখেছো...?
কেন নেই...? ভেবেছো...?
সেই নিয়ে আসলে একটা মজার গপ্পো আছে... বলি শোনো...
সে অনেককাল আগের কথা। বজ্রনাভ বলে এক সাঙ্ঘাতিক রাক্ষসের ক্ষমতা তখন তুঙ্গে! তার জ্বালায় দেবতাদের দুঃখের অন্ত নেই...
সব্বাই মিলে ছুটে গেল ত্রিদেবের কাছে। প্রথমে ব্রহ্মা...
তা এম্নিতে ব্রহ্মাঠাকুর শান্ত মাথারই মানুষ... কিন্তু,দেবতাদের দুঃখু শুনে ভয়ানক রেগেটেগে গিয়ে তিনি হাতের নীল পদ্ম ছুঁড়ে দিলেন মর্ত্যের দিকে! আগুনের মত সেইফুল এসে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিল বাজে রাক্ষসটাকে!
দেবতারা তো মহাখুশি! কিন্তু যুদ্ধু করতে গিয়ে নীলপদ্মের তিনটে পাপড়ি টুপ টুপ করে খসে পড়ে গেল মাটিতে;একটা বড়,একটা মাঝারি আর একটা এএইটুকুনি...
যেখানে পড়লো সেখানে ঠিক সেই মাপের তিনখানি দীঘি হল; এক্কেরে গায়েগায়ে,পাশাপাশি...
দীঘি দেখতে ব্রহ্মা আর সব দেবতারা নেমে এলেন মর্ত্যে। কি সুন্দর দীঘি! কি টলটলে জল...! ব্রহ্মদেবের 'কর' থেকে 'পুষ্প' পতনে তৈরী দীঘি তিনটের নাম হল 'পুষ্কর'...
সব্বাই বললে, এইখেনে ব্রহ্মাঠাকুরের একখান মন্দির হোক। ব্রহ্মা রাজি হলেন মনে মনে এত্ত খুশি হয়ে।
তা মন্দির তো এমনি এমনি হবে না! যজ্ঞ করতে হবে...!! যাতে রাক্ষসেরা আর হাঙ্গামা না করতে পারে, তাই দীঘিদের ঘিরে পাহাড় তৈরী হল...
দক্ষিণে রত্নগিরি,উত্তরে নীলগিরি,পশ্চিমে সনচূড়া,পূর্বে সূর্যগিরি...
বেশ...! প্রস্তুতি শেষ... ডাক পড়লো সরস্বতীর... এরকমই তো নিয়ম! যজ্ঞ করতে গেলে ব্রহ্মা-সরস্বতীকে একসাথে বসে করতে হবে। খোঁজ... খোঁজ... খোঁজ...
সরস্বতীর পাত্তা নেই! কি করে থাকবে...? তিনি তো ওদিকে অপেক্ষা করে আছেন কখন লক্ষী, পার্বতী আর ইন্দ্রানী সেজেগুজে তৈরী হবেন...!!
এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে... পুরোহিতরা বললেন, "ভালো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু..."
ব্যাস্...! ব্রহ্মা গেলেন ক্ষেপে... রেগেমেগে বললেন, "অন্য মেয়ে দ্যাখো... আমি তাকে বিয়ে করে মন্দিরের কাজ সারবো... চাই না সরস্বতীকে..."
গাঁয়ের এক গয়লানির মেয়ে তখন যাচ্ছিল সেই পথে। ইন্দ্র আর বিষ্ণু তাকেই ধরে আনলেন... নতুন করে দেবীরূপে গড়ে দিলেন তাকে... তার নাম হল গায়ত্রী...
বিয়ে হল। তারপর যজ্ঞে বসা... দিব্বি চলছে সব... যজ্ঞ যখন মাঝপথে তখন সদলবলে সরস্বতী এসে হাজির।
ব্রহ্মার পাশে গায়ত্রী'কে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে গেল...!!
তক্ষণি অভিশাপ বেরিয়ে এল তাঁর মুখ থেকে,
"ব্রহ্মদেব...!! জগতের স্রষ্টা তুমি... আর এতটুকু ধৈর্য্য নেই তোমার...?? এত্ত সখ বুঝি মন্দিরের...?
অভিশাপ দিলাম,
এই এক পুষ্করই সার...
এ জগতে কখনওই আর
মন্দির হবে না তোমার...!!
ইন্দ্র, দেবতাদের রাজা তুমি... আর এত বড় অনাচারে প্রশ্রয় দিলে,
অভিশাপ দিলাম,
কক্ষনও জয় আসবে না কো যুদ্ধ হতে...
লক্ষ'টা যুগ লাগবে তোমার শুদ্ধ হতে...!!!
হে বিষ্ণুদেব,তোমাকে জগতের লোক পালনকর্তা বলে ডাকে...? তুমি নাকি সব্বারির ভালো চাও...? সব্বাইকে ভালো বাসো?
অভিশাপ দিলাম,
হারিয়ে যাবে স্বস্তি তোমার
সারা জীবন একলা রবে...
মানুষ হলে আপনজনার
বিরহদুখ তোমার হবে...!!!
আর এই যে পুরোহিতের দল... তোরা বুঝি আশির্বাদের আশায় সঙ্গ দিয়েছিলি এইসব দেবতাদের...?
তোদেরও শাস্তি হবে..!
অভিশাপ দিলাম,
লাখ আয়োজন! তোদের সেসব রুচবে না...
জন্মে তোদের দারিদ্রতা ঘুচবে না...!!"
এইসব বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলেন সরস্বতী...
হায় হায়...!! এ কি হল...!!
সক্কলের মুখে কালো ছায়া নেমে এল...ভয়ে প্রাণপাখি উড়ে যায় আর কি...!!
তখন গায়ত্রী সমাধান দিলেন... যজ্ঞের বলে তিনিও তখন পুরোদস্তুর দেবী...
তিনি বললেন,
"মুখ তোলো! মুখ তোলো! দেবী ও দেবেরা...
পুষ্কর হবে সব তীর্থের সেরা...!
স্বর্গ-সিংহাসন ইন্দ্র আপনার
থেকে যাবে... যুদ্ধেতে হোক যত হার।
সতীসীতা সাথে করে মানবজনম
বিষ্ণু নেবেন... নাম পুরুষোত্তম।
ধনলক্ষী করে থাক যত মুখ ভার...
পুরোহিতদল হবে জ্ঞানভান্ডার।"
তা এই হল গিয়ে গল্পটা...
গায়ত্রীর সবকটা কথা কিন্তু ভালোমতই ফলে গেছে...
খালি ব্রহ্মার মন্দিরের ইচ্ছে ওই পুষ্করে শুরু আর পুষ্করেই শেষ হয়ে গেল।
রাজস্থানেই তো পুষ্কর। চাইলে গিয়ে দেখো... সারা দুনিয়ায় ব্রহ্মার ওই একটি মাত্তর মন্দির...
তবে জায়গাটি খাসা... গিয়েছিলুম তো এই কবে... এখনও দীঘির জল ওরকমই টলটল করে... সূর্যাস্তে মিশে যায় সেদিনের যজ্ঞের রঙ আর পাহাড়গুলোর গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফেরে সরস্বতীর অভিশাপগুলো...
Tag :
পুঁথি-পাঁচালি-পুরাণের গল্প,